×

আন্তর্জাতিক

সুকিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০২:০৪ পিএম

সুকিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিরবতা পালন করায় অং সাং সুকিকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনশেন্স’ প্রত্যাহার করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, সুকি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে লজ্জাজনকভাবে সরে যাওয়ার কারণে ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনশেন্স’ সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে অং সান সুকিকে জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘অং সান সুকির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সুচি ও তার দপ্তর তাদেরকে রক্ষা করেছেন।’ চিঠিতে সংস্থাটি জানায়, ‘রোহিঙ্গাদের পক্ষে অং সান সুকির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এইসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।’ সেখানে বলা হয়, ‘সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি ও সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু অং সান সুকির সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অং সান সুকি সাহায্য করুণ আর নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর সেখান থেকে নতুন করে আরো সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় এর আগেও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সুকিকে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডার পার্লামেন্টের দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেওয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেওয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাবসহ আরো অনেক সম্মাননা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত লন্ডনভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এরআগে জাতিসংঘও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে এবং এই অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহবান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে অং সান সুকিকে ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনশেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অং সান সুকির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। সেই সম্মাননাই এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App