×

জাতীয়

রাজনৈতিক দল ও জোটে আসন ভাগের তোড়জোড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১১:১১ এএম

রাজনৈতিক দল ও জোটে আসন ভাগের তোড়জোড়
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রয়েছে ৩৯টি দল। কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দল বা ড. কামালের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়াও বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ৮টি বাম দলের সমম্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটও রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে ১১ নভেম্বরের মধ্যে ইসিকে জানাতে হবে। এর ব্যত্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। সেই হিসাবে ইসির বেঁধে দেয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ। এই প্রেক্ষাপটে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত ফয়সালার আগেই আসন বণ্টনের ফয়সালা চায় উভয় জোটের শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত ইসলামী জোট। এ ছাড়া জাকের পার্টি, ইসলামী দলগুলোর সমম্বয়ে গঠিত ইসলামী ঐক্যজোট, নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৫ দলের একটি জোটও মহাজোটে থেকে নির্বাচন করতে চায়। তবে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার তালিকা ইসিতে জমা দেয়ার আগে আসন বণ্টনের ওপর জোর দিচ্ছেন অনেকেই। জানা গেছে, মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোট আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে দর কষাকষির মাধ্যমে ৭০টি আসন পাবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা। ধারণা করা হচ্ছে এবার জাতীয় পার্টির জোটকে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০টি আসন ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলছেন, আমাদের একক কোনো তালিকা ইসিতে জমা দিতে হবে না। জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে যেখানে যে প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসার মতো, তাকে সেখানেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো তালিকা দিতে হবে না। আসন বণ্টনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপরই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু জাসদের (একাংশ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, গত নির্বাচনে আমরা যে আসন পেয়েছি, এবার তার চেয়ে বেশি আসন আমরা চাইব। জোটের অন্যান্য শরিক সাম্যবাদী দল-এমএল, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টিও আসনের বিষয়টি শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে নিজ নিজ দলের যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন বলেও জানান ওই সব নেতারা। সেক্ষেত্রে ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি, জাসদ (ইনু) ১০টি, জাসদ (আম্বিয়া) ১৫টি, জেপি (মঞ্জু) ৪টি, তরীকত ফেডারেশন ৩টি, সাম্যবাদী দল ৪টি, জাকের পার্টি ২-৩টি, তৃণমূল বিএনপির জোট ৪টি আসনের তালিকা জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন জানতে চেয়েছেন কোন কোন দল জোটগতভাবে অংশ নিতে চায়। আসন বণ্টনের এখনো সময় আছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দল, সম্মিলিত জোটসহ আরো কয়েকটি দল সংলাপে অংশ নিয়েছেন। ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও আরো বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন। আজ রবিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা হবে। সেখানে আসন বণ্টন ও মহাজোট সম্প্রসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়া, না নেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট আসন বণ্টন মোটামুটি চূড়ান্ত করে রেখেছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জোটের বৈঠকে আসন বণ্টন চ‚ড়ান্ত করা নিয়ে আলোচনা হয়। জানা গেছে, বিএনপির কাছে জোটের নিবন্ধিত ৭টি দল ১৩টি আসন চেয়েছে। এ ছাড়া অনিবন্ধিত অধিকাংশ দলগুলো বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেছেন। নিবন্ধন হারানো বিএনপির পুরনো মিত্র জামায়াতে ইসলামী ৪০টি আসন দাবি করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির (পার্থ) দুটি, কর্নেল অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৩টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চায় ২টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা ১টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ১টি, জোটের শরিক নিবন্ধিত ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২টি, লেবার পার্টি ২টি, খেলাফত মজলিস ২টি আসন চেয়েছেন বলে জানা গেছে। ২৩ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, যাদের নিবন্ধন নেই তারা বিএনপির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ বিষয়ে গত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, আ স ম রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের প্রত্যাশার বিষয়টি গতকাল পর্যন্ত জানা যায়নি। এসব দলের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন দূত চ‚ড়ান্ত হবে দলীয় সূত্র জানায়। গতকাল রাতেই বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট বৈঠকে এ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অপর দুটি জোট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট। বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, রেজা আলী বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন। এই জোটে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), এনপিপি, জনপার্টি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণসাস্কৃতিক দল, এনডিএফ জোট ও বাংলাদেশ শরীয়াহ আন্দোলন। তবে কোনো কোনো সূত্রে জানা গেছে, যুক্তফ্রন্ট ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এরই মধ্যে এই ফ্রন্টের কয়েক জন নেতা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন, এমনটি জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৮টি দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট নির্বাচন কমিশনে জোটবদ্ধ তালিকা দেয়ার পরিবর্তে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাবেন বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App