×

মুক্তচিন্তা

বিএনপির ভূত ভবিষ্যৎ জনগণ যেখানে দর্শক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:২৩ পিএম

খাদের কিনারায় দাঁড়ানো বিএনপি এখনো অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে। তাদের উচিত সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তায় আসা। অতীতে দলের বদল প্ল্যাটফর্ম বনে যাওয়ার কারণে যারা বিএনপির ট্রেনে উঠেছিল তারা নিজ নিজ স্টেশনে নেমে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবারের নেতারা দলটিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় সেটাই ভাবার বিষয়। আর দেশ জনগণ? তারা এখনই শেখ হাসিনাকে ত্যাগ করবেন না। আর তাদের কোনো কথার কবে মূল্য দিয়েছিলেন আমাদের নেতারা?

মুখে আমরা যাই বলি না কেন রাজনীতিই ঘিরে আছে আমাদের। দেশে, দেশের বাইরে মানুষ ভীতশ্রদ্ধ হওয়ার পরও এই হলো মূল টপিক। সবাই মুখে বলছেন আমাদের কিছু যায় আসে না কিন্তু বাস্তবে রাজনীতিনির্ভর সমাজ ও দেশে এড়ানোর পথ নেই। পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই ঘুরেফিরে রাজনীতিই আরাধ্য। সংলাপ নিয়ে এত লেখা এত বিশ্লেষণ তাতে আর নতুন কিছু যোগ করা অসম্ভব প্রায়। তবু দুয়েকটা কথা বলতে হয়। আসলে এখন অবধি কারা জয়ী? কারা এগিয়ে আছেন?

শুরু করব আওয়ামী লীগের ভুল দিয়ে। তাদের সামনে এখন যেসব নেতা বাধার পাহাড় হতে চাচ্ছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগার বা এর সঙ্গে ছিলেন। ড. কামাল হোসেন কোনোদিন এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন বা তার পাশে বসে থাকবেন বিএনপির নেতারা এটা কেউ ভাবেনি। এমনকি তিনি যখন দল ছেড়ে গেলেন তখনো না। গণফোরাম থেকে অবধি কামাল হোসেন কোনো ফ্যাক্টর ছিলেন না। তাই আওয়ামী লীগও বিশেষ গা করেনি। যেই মুহ‚র্তে তিনি বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মঞ্চে এলেন শুরু হয়ে গেল সংলাপ পর্ব। কারণ বিএনপি এখনো একটি শক্তিশালী দল। আগের জায়গায় না থাকলেও তারেক জিয়া বা খালেদাকে ছেড়ে আসতে পারলে তাদের অবহেলা করার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা কাদের সিদ্দিকী যিনি একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। এমনকি পঁচাত্তরেও তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ সংঘটিত করার চেষ্টা করেছিলেন। জিয়ার আমলে দেশে আসতে না পারা এই মানুষটি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তার স্বরে গলা ফাটাচ্ছেন। মান্নাও সরব। থলিতে যত ভোটই থাকুক তিনি জানেন আওয়ামী বিরোধিতা করে পার পেতে বিএনপির বিকল্প নেই। এসব সমীকরণে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এখন দেশ ও জাতির সামনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। আ স ম রব সাহেব আওয়ামী লীগ করেননি কোনোকালে। ছাত্রলীগ করতেন তারপর জাসদ। তিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রীও ছিলেন। আজ তার গলা শুনলে মনে হয় তিনিই কতল করে দেবেন সবাইকে।

এই হালচিত্রে দেশের লাভ বা লোকসানের কথা পরে। বিএনপির কি লাভ? এই দলটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে শহীদদের অবমাননা করে যে পাপ করেছিল তার দায় তারা এখন মেটাচ্ছে। কিন্তু জামায়াতের মতো দলের সমর্থন না থাকলে তারা দেশে সরকার গঠন করতে পারত না। সে হিসাবটা তারা জানে বলেই জামায়াত মুসলিম লীগ বা এমন সব দলের সঙ্গে জোট বেঁধে দেশকে পাকিস্তানের ছায়ায় চালাতে চেয়েছিল। সে কাহিনী পুরোটাই পাল্টে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠতায় দেশ এখন অগ্রগতির জয়রথে। এটা সম্ভব না হলে মানুষই পথে নেমে আসত। আপনি দেখবেন উন্নত দেশগুলোতে মানুষ রাজনীতিবিমুখ। আমাদের এই দ্বিতীয় আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ভোটদানের ব্যর্থতায় জরিমানার বিধান না থাকলে দশ পার্সেন্ট ভোটও পড়ত না। এমনকি এখনো মানুষ যায় বটে কাকে ভোট দেয় কেন দেয় জানে না। শুধু আর্থিক কিছু লাভ-লোকসান বা দেশের নিরাপত্তার বাইরে আর কোনো হিসাব কাজ করে না এখানে। বাংলাদেশ যত দ্রুত বদলে যাচ্ছে ততই তার রাজনীতি জনবিমুখ হয়ে পড়ছে। সম্ভবত সে কারণে সত্তর দশক বড়জোর আশির দশকের পর আর কোনো নেতার জন্ম হয়নি। মানুষ তাদের চেনেও না।

এমন বাস্তবতায় বয়স্ক মানুষজনদের ভিড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে তারা কতটা আধুনিক বা নতুন প্রজন্মের ধারণা বা চিন্তা তারা কতটা ধারণ করতে পারেন। পোশাক থেকে উগ্রতায় তার কোনো চিহ্ন দেখি না। বরং রব বা মান্না যেভাবে কথা বলেন তাতে শঙ্কিত হতে হয়। এরা বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকবে না দলটিকে উদ্ধার করবে? এই আলোচনার আগে বলা যায় এদের ঐক্য সাময়িক। কারণ ইস্যুভিত্তিক ঐক্য আর আদর্শিক ঐক্য এক নয়। এখানে কোনো আদর্শ নেই। যে কারণে ড. কামাল হোসেনকে তারা নেতা মানলেও তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেন না। দেশে এখন এটাই সত্য জো জিতাগা ওহি সিকান্দার। আর যো হারেগা ওহি মইনুল। ব্যারিস্টার যে সাধারণ কারাবন্দিদের সঙ্গে আছে এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে? ঢোকার আগে ড. কামাল হোসেনকে কাওয়ার্ড বলা মইনুল হোসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেও দলের কেউ তার ব্যাপারে সরব না। যার মানে যার যার আখের সে সে গোছানোর ধান্দায় ব্যস্ত।

বিএনপি ও বঙ্গবন্ধু কখনোই সমর্থক হতে পারে না। তাই যাদের মুখে বঙ্গবন্ধু গায়ে মুজিব কোট তারা কীভাবে এ দলের ত্রাণকর্তা হতে পারেন? এই সবিরোধিতায় দলটির শেষতক কি হয় সেটাই বরং দেখার বিষয়। বিএনপি যা পারত বা যা করলে তাদের উপকার হতো তা তারা করবে না। তাদের উচিত তারেক জিয়ার বলয় থেকে বেরিবে আসা। মানুষ আর যাই হোক খুন জখম মারামারি চায় না। কেউ তাদের বলেনি গণতন্ত্র না থাকলেও তারা একুশে আগস্টের মতো ঘটনাকে সমর্থন করবে। দায় এড়ানোর অপচেষ্টা আর সত্য স্বীকার ভিন্ন বিষয়। এ পর্যন্ত কোনো দায় নিতে অস্বীকার করাই বিএনপির কাল। তারা মনে করেছিল সাম্প্রদায়িকতা ভারত বিরোধিতা পাকপ্রীতি আর মধ্যবিত্তের সুবিধাবাদ দিয়েই জীবন চলে যাবে। তা যে হওয়ার না এখন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যার কারণে লজ্জা শরম ভুলে ড. কামাল হোসেন বা অন্যদের মেনে রাজনীতি করছে। খেয়াল করবেন মির্জা ফখরুল ব্যতীত মওদুদ সাহেব বা দুয়েকজন ছাড়া বাকিদের চেহারাই দেখা যায় না। এই যে সংলাপ গণভবনে গিয়ে ভালোমন্দ খাওয়া কিংবা আলাপ করা কোথাও রিজভী ছিলেন? অথচ যত বড় বড় কথা আর গালাগাল তাকে দিয়েই দেয়ানো হয়। তার মানে এই তারা জানে এমন মানুষ আর যাই হোক শান্তির সহযাত্রী হতে পারে না। ধারণা করি গয়েশ্বরও সে কারণেই যাননি। মুখ দেখানোর পথ নিজেরা বন্ধ করলে যাওয়ার পথ তো রুদ্ধ হবেই।

এ কথা বলা যেতেই পারে নিজেদের শক্তি সাহস আর নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বলেই বিএনপি কারো কারো ওপর ভর করে বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য এই লড়াইয়ে তাদের ছেড়ে যাওয়া অথবা বহিষ্কৃত মানুষরাই আছে সামনের কাতারে। এখান থেকে তাদেরও লেসন নেয়া দরকার। ঘরশত্রু বিভীষণ বা মুশতাক তৈরি করা লীগের একটা কালো অধ্যায়। এতকাল পরও তার সুরাহা হয়নি। তাদের এ ব্যাপারে সাবধানতার বিকল্প নেই। না হলে এ বিপদ তাদের ছেড়ে কথা বলবে না।

অন্যদিকে খাদের কিনারায় দাঁড়ানো বিএনপি এখনো অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে। তাদের উচিত সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তায় আসা। অতীতে দলের বদল প্ল্যাটফর্ম বনে যাওয়ার কারণে যারা বিএনপির ট্রেনে উঠেছিল তারা নিজ নিজ স্টেশনে নেমে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবারের নেতারা দলটিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় সেটাই ভাবার বিষয়।

আর দেশ জনগণ? তারা এখনই শেখ হাসিনাকে ত্যাগ করবেন না। আর তাদের কোনো কথার কবে মূল্য দিয়েছিলেন আমাদের নেতারা?

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App