×

বিনোদন

ঢাকা পদাতিকের ‘কথা-৭১’ মঞ্চস্থ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩৭ পিএম

ঢাকা পদাতিকের ‘কথা-৭১’ মঞ্চস্থ
প্রথম সারির নাট্য সংগঠন ঢাকা পদাতিক। ‘নাটক হোক জীবনের প্রকাশিত সত্য, নাটক হোক জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার’ স্লোগানে এক ঝাঁক উচ্ছল ও প্রাণবন্ত তারুণ্যের সমাবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা পদাতিকে। দলটির নিয়মিত প্রযোজনায় ‘কথা-৭১’ নাটকটির ৪৮তম প্রদর্শনী হলো। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে লেখক ও গবেষক কুমার প্রীতিশ বল রচিত ‘কথা-৭১’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। ‘কথা-৭১’ নাটকে দেখা যায় একজন মুক্তিযোদ্ধা এখনো আত্মযন্ত্রণায় ভুগছেন। কারণ যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে। ওই মুক্তিযোদ্ধা এ জন্য সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো দলের ব্যানারে কাজটি করেন না। একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামেন। তার বিশ্বাস, এ কাজে অনেকেই অতঃপর এগিয়ে আসবে। এই মুক্তিযোদ্ধা একটি সফল সমাবেশ সম্পন্ন করে বাসায় ফিরে দেখেন তার সন্তান ঘরে উচ্চ শব্দে ইংরেজি গান শুনছে। মুক্তিযোদ্ধা পিতা এ জন্য বিরক্তবোধ করেন। তিনি গান বন্ধ করে দেন। এতে ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে পিতার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়। পিতা-পুত্রের এই বিতর্কের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বেরিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই অপারেশন সার্চলাইট নিয়ে পাকিস্তানি আর্মিরা পর্যালোচনার মাধ্যমে গণহত্যার রূপরেখা চূড়ান্ত করে। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর হামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। শুরু হয় গণহত্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সেই গণহত্যা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) অধ্যাপক নূরুউল্লা নিজের ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করার মাধ্যমে ৭১ এ গণহত্যার প্রামাণ্য দলিল তৈরি করেন। জগন্নাথ হলের নিহতের লাশ সরায় ডোমরা। এরই মধ্যে চুন্নু ডোম এবং পরদেশি ডোম কথা বলে ঢাকা শহরের নির্মম গণহত্যা নিয়ে। নাটকের ভেতরেই জানা যায়, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং মর্মান্তিক ধর্মান্তরের কথা। অধ্যাপক যতীন সরকারের স্ত্রী কানন সরকারের ধর্মান্তরের প্রতিবাদ করায় মাওলানা সাহেবেকে মসজিদে খুন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা বিরোধীদের শান্তি কমিটি রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন, তাদের এবং পাকিস্তানি আর্মিদের অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যায় দিশেহারা বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। গঠিত হয়, মুক্তিবাহিনী, মুজিবনগর সরকার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পরিবেশিত অনুষ্ঠান সেদিনের বিধ্বস্ত বাঙালি জাতির মনে বিরাট আশার সঞ্চার করে। ‘কথা-৭১’ নাটকের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধারা বারবার ইতিহাসের সত্যের মুখোমুখি হন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই সত্য ইতিহাস যথার্থভাবে উপস্থাপন হয়নি বলেই তরুণদের একটি অংশ আজও বিভ্রান্ত, ‘কথা-৭১’ ইতিহাসের সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করারই একটি উদ্যোগ মাত্র। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ফিরোজ হোসাইন, কাজী চপল, সিফাত বিন আজিজ, শেখ শান-এ-মাওলা, এইচ এম মোতালেব, জোসেফ পরিমল রোজারিও, আবুল হাসনাত, কিরণ জাকারিয়া, খন্দকার আতিকুর রহমান, সম্রাট আহমেদ, শ্যামল হাসান, মিল্টন আহমেদ, তারেক আলী মিলন, জে এ বৎস, শরিফুল ইসলাম মামুন, সালাউদ্দিন রাহাত আখতার হোসেন, বিজন কান্তি ধর, কাজী আমিনুর, বর্ণালী আক্তার সেতু, সিরাজুম মুনিরা ইকরা, মারজিয়া জাবীন তম্বী, মীর ফারজানা আক্তার নীপা, আরিফ হোসেন প্রত্যয়, আবুবকর দাউদ তুহিন, মামুন উর রশিদ, কাজী শিলা। নাটকের নেপথ্য কলাকুশলীরা হলেন মূল ভাবনায় গোলাম মোস্তফা, মঞ্চ মঞ্জুর আহমেদ, আবহ সঙ্গীত সাইদুর রহমান লিপন, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, প্রপস কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, পোশাকে কাজী শিলা, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, আলোক প্রক্ষেপণে মাসুদ আহমেদ, আবহসঙ্গীত প্রক্ষেপণে রিয়াজ আহমেদ, মিলনায়তন ব্যবস্থাপনায় মো. মনির উজ্জামান তালুকদার, মঞ্চ অধিকর্তা এইচ এম মোতালেব ও খন্দকার আতিকুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা তারেক আলী মিলন, প্রধান সমন্বয়কারী ফিরোজ হোসাইন এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মিজানুর রহমান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App