×

মুক্তচিন্তা

ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৪ পিএম

শীত আসার আগেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট। রাজধানীসহ আশপাশের কিছু এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। গ্যাসের অভাবে শুধু রান্নাবান্নাই বিঘ্নিত হচ্ছে না, ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। অন্যদিকে মহেশখালীতে এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়ায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। ভোরের কাগজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাতে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ সিলিন্ডার গ্যাসে রান্নাবান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্যাস সংকটের কারণে গাড়ির গ্যাস নিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহ ধরে গ্যাস নেই এমন খরব গণমাধ্যমে উঠে আসছে। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২৬৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা রয়েছে ৪৪৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন কম পাওয়া যাচ্ছে। গত ৩ দিন ধরে চট্টগ্রামের সব ধরনের গ্রাহক চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না। ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়ে আসছিল কেজিডিসিএল। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের মতো জাতীয় গ্রিডনির্ভর হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন শুধু গ্রিড থেকে পাওয়া গ্যাসই সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাহকের কাছে। এতে কমে গেছে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন। বন্ধ হয়ে গেছে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার সার কারখানা (সিইউএফএল)। ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসের এমন সংকট আজকের নয়। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু কেন এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না- এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। রাজধানীতে কোনো কোনো এলাকায় গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের চাপ গ্রীষ্ম মৌসুমেও কম থাকে। শীত মৌসুমে সংকট আরো বেড়ে যায়। এটা সত্যি রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায়ই প্রায় সারা বছর আবাসিক সংযোগের পাইপলাইনে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ থাকে। আর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংকট লেগেই থাকছে বছরের পর বছর। গ্যাসের মজুদ সংকটের চেয়ে এ ক্ষেত্রে সঞ্চালনগত সমস্যাই বেশি দায়ী। দেখা গেছে, একটা সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এক ধরনের পাইপ বসানো হয়েছে, সময়ের ব্যবধানে ওই এলাকার গ্রাহক বেড়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ। ফলে আগের সেই সংকীর্ণ পাইপলাইন দিয়ে ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে শীত মৌসুমে পাইপলাইনে তরল হাইড্রো কার্বন জমেও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়- এটাও গ্যাস সংকটের আরেকটা কারণ। রাজধানীর আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের ভোগান্তির এসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে বহু আগে। এসব নিয়ে লেখালেখিও সব সময়ই হচ্ছে। তারপরও কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস নির্ভরতাও দ্রুত কমছে না। সর্বোপরি, গ্যাসের চাহিদা মেটানো ও গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান ও খনন করে গ্যাসের মজুদ বাড়াতে হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সর্বোপরি গ্যাসের সাশ্রয়ী ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App