×

পুরনো খবর

কায়কোবাদ সাম্রাজ্যে হাল ধরবেন কে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৩৩ পিএম

কায়কোবাদ সাম্রাজ্যে হাল ধরবেন কে?
বিএনপির দুর্গ কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের হাল ধরবেন কে? কে হবেন সাবেক সাংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সাম্রাজ্যের অধিপতি? তার রাজনৈতিক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কে আসছেন? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নাকি কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া সরকার, নাকি কায়কোবাদের ছোট ভাই জুন্নন বশরী, না তার আরেক ভাই ইয়েমেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত মজিবুল হক? নাকি আসনটি চলে যাবে আওয়ামী লীগের দখলে? এ নিয়ে মুরাদনগরের রাজনীতিতে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাবেক সাংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর এই অনিশ্চয়তা থেকেই বিএনপিতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সুযোগ নিতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগও। বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে কুমিল্লা-৩ কায়কোবাদ পরিবারের জন্য সংরক্ষিত আসন হিসেবেই পরিচিত। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. ওয়ালী আহমেদ জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার আবু জাহের বিজয় লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। পরে একই আসনে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের নির্বাচনে জাপার (এরশাদ) লাঙ্গল নিয়ে তিনি আবারো বিজয়ী হন। কিন্তু ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ধানের শীষ নিয়ে জয়ী নন। পরে ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় এবার তার প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা চাইছেন, কায়কোবাদের ভাই বা কায়কোবাদ পরিবারের অন্য কাউকে এ আসনে প্রার্থী দেয়া হোক। অন্যদিকে বিএনপির আরেকটি বড় অংশের নেতাকর্মীরা বিএনপির দুর্গখ্যাত এ আসনটি উদ্ধার করতে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অথবা গোলাম কিবরিয়া সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বার্ধক্যজনতি অথবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তার অনুসারী বর্তমানে মাঠে থাকা কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া সরকারকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কায়কোবাদ অনুসারী বিএনপির নেতারা বলছেন, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদই আগামী নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হবেন। আইনগত কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হতে না পারলে কায়কোবাদের পরিবারই ঠিক করবে বিকল্প প্রার্থী। তবে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, কায়কোবাদ পরিবারের বিকল্প হিসেবে অন্য কাউকে প্রয়োজন হলে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অথবা গোলাম কিবরিয়া সরকারকে এখানে প্রার্থী করতে হবে। মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোল্লা মজিবুল হক বলেন, তারা এখনো আশাবাদী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার সরকারি কূটকৌশল যদি সফল হয়ই, তবে তারা কায়কোবাদের পছন্দের কাউকে কে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া কোনো নির্বাচনের কথা ভাবছি না আমরা। আগামী নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ড এখানে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী আমরা। আদালতের উপর নির্ভর করছে এ আসনে কায়কোবাদ প্রার্থী হতে পারবেন কিনা। নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, আমরা আগে চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি। এরপর মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া আমাদের হাইকমান্ড ও মুরাদনগর বিএনপির অভিভাবক ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এদিকে কায়কোবাদের অনুপস্থিতিতে এ আসনে ঘাঁটি গড়তে চায় আওয়ামী লীগ। মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। মুরাদনগরের মাঠে-ঘাটে-হাটে-বাজারে সর্বত্র দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার ঝুলছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হানিফ সরকার ও ম. রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরু। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছেন, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলোও ঐক্যবদ্ধ থেকে তার পক্ষে কাজ করছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির আক্তার হোসেন ও নাজমা বেগম, জেপির (মঞ্জু) জাহাঙ্গীর আমীর ও ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলনের আহম্মেদ আবদুল কাইয়ুমও গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App