×

পুরনো খবর

জিয়া পরিবারের আসনে আসতে পারে নতুন মুখ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৪৪ পিএম

জিয়া পরিবারের আসনে আসতে পারে নতুন মুখ
জাতীয় সংসদের বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) আসনটির পরিচিতি মূলত জিয়া পরিবারের জন্য সংরক্ষিত আসন হিসেবে। কেননা এই আসনের গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি। যে কারণে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এ আসনে জিয়া পরিবারের সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৫টি সংসদ নির্বাচনেই এ আসনে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারো তিনি প্রার্থী হতে পারেন। তবে মামলায় সাজা হওয়ায় যদি তিনি প্রার্থী না হতে পারেন সে ক্ষেত্রে আসতে পারে নতুন মুখ। গাবতলী উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং শাহজাহানপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬১ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩২ হাজার ৩০৮ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৩১৪ জন। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী এডভোকেট মুহম্মদ আলতাফ আলী এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান এ আসনে প্রার্র্থী না হলে দেখা যেতে পারে নতুন চমক। সে ক্ষেত্রে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কিংবা আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। জিয়া পরিবারের কেউ না হলে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু। তবে দলীয় হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই বিএনপি একাট্টা হয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নেতাকর্মীরা। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএমএ বগুড়া শাখার সভাপতি ও স্বাচিপ নেতা ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকেতা, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি কামরুন্নাহার পুতুল, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক জেলা সভাপতি এ কে এম আসাদুর রহমান দুলু, গাবতলী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এ এইচ আজম খান ও কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ ইমারত আলী। জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান এমপি জেলা জাপার সহসভাপতি ৭৪ বছর বয়সী এডভোকেট আলতাফ আলী, জাপার সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু, জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা লুৎফর রহমান স্বপন সরকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জামায়াত কিংবা অন্য দলের কোনো প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কামরুন্নাহার পুতুল গত ১৯৯৬ সালে জয়পুরহাট-বগুড়া এলাকার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বগুড়ার শহীদ শহিদুল ইসলাম পটলের স্ত্রী। তিনি সাংসদ থাকাকালে এ এলাকায় সাধ্যমতো উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। তিনি গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোট হওয়ার কারণে তিনি মনোনয়ন পাননি। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট আলতাফ আলী প্রথম ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি সেই নির্বাচনে ৯২ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তফা আলম নান্নু ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমরাত আলী ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোট হওয়ার কারণে তার স্থলে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জাপা নেতা এডভোকেট আলতাফ আলীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিগত ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও জিয়ার জন্মভ‚মি এ আসনে ধানের শীষের বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। সেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে ভেদাভেদ ভুলে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি নতুন প্রার্থী দিলে নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে গাবতলী উপজেলায় ৮৮টি ও শাহজাহানপুর উপজেলায় ৭৩টি সর্বমোট ১৬১টি ভোট কেন্দ্রের ৮৫৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন এ কে এম মুজিবুর রহমান। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে আজিজুল হক ১৯৮৬ জাতীয় পার্টি থেকে আমিনুল ইসলাম সরকার ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু নির্বাচিত হন ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে খালেদা জিয়া, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আবারো খালেদা জিয়া রেকর্ডসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত এডভোকেট মুহম্মাদ আল আলী গোপন ব্যালটের ভোটে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে সহিংসতার কারণে ৪৬টি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই নগণ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App