×

পুরনো খবর

আ.লীগের ভরসা শেখ হাসিনা, সমীকরণে ব্যস্ত বিএনপি-জাপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:১৪ পিএম

আ.লীগের ভরসা শেখ হাসিনা, সমীকরণে ব্যস্ত বিএনপি-জাপা
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটিতে দৃশ্যমান যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই হয়েছে। তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রতিটি উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। আর এই উন্নয়নের কারণে পীরগঞ্জবাসী আগামী নির্বাচনেও এ আসনের প্রার্থী হিসেবে পেতে চান শেখ হাসিনাকে। এ চাওয়া তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মন্ডল। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে পীরগঞ্জ উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু দলীয় চেয়ারম্যানের সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে স্থানীয় নেতারা নিশ্চিত করেছেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মন্ডলের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও নবম এবং দশম সংসদ নির্বাচনে পরপর এমপি নির্বাচিত হন। তখন থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমানে এ আসনের এমপি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডলকে অনেকে শক্ত প্রার্থী মনে করা হলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তা মনে করেন না। এলাকার উন্নয়নের জন্য গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৫ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী জাতীয় পার্টির নুরে আলম যাদু পান ৪ হাজার ৯৫৯ ভোট। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ ভোট পেয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৭৬ হাজার ৩৪৮ ভোটের ব্যবধানে চারদলীয় জোট প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ মন্ডলকে পরাজিত করেন। এবারো ঘুরেফিরে আসছে এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ। এলাকার পুত্রবধূ হওয়ার তার প্রতি একটা সহানুভ‚তিতো রয়েছেই। এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, রংপুরে যা উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে। বিগত প্রায় ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তা হয়নি। বিনামূল্যে বই বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা এ সরকারেরই অবদান। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ কম পয়সায় সহজে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ থেকে সব সুযোগ গ্রহণ করতে পারছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, পীরগঞ্জ উপজেলা ছিল একটি পশ্চাৎপদ এলাকা। যা উন্নয়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই হয়েছে। তার সদিচ্ছার কারণে এ উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এলাকাবাসীর দুঃখ করতোয়া নদীর উপর এম এ ওয়াজেদ মিয়া সেতু নির্মিত হয়েছে। এতে করে পীরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে দিনাজপুরের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যা গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুরে সহজ যোগাযোগে অবদান রেখে চলেছে। উপজেলা সদর পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়েছে। আর পীরগঞ্জ পৌর এলাকার রাস্তার দুপাশে ১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এলাকার নুরুন্নবী মিয়া, এম এ গনিসহ অনেকেই জানালেন, পীরগঞ্জের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে মেরিন একাডেমি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পুষ্টি স্বাস্থ্য অফিস প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ সরকারি হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এলাকাবাসী উন্নয়ন চান, পরিবেশ চায় স্থিতিশীল, যা একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই দিতে সক্ষম হয়েছে। এসব কারণেই আশা করছি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হবেন এবং ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবেন পীরগঞ্জবাসী। তবে বেশির ভাগ সময়ই সরাসরি কেন্দ্র থেকে এখানকার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে প্রার্থী হলে অন্যান্য দলের প্রার্থীর অবস্থান কি হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তারা জোট, ভোট এবং প্রার্থীর সমীকরণ মেলাতে নানাবিধ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় তারাও জনগণের মাঝে দায়িত্বশীল ভূমিকা গড়ে তুলতে পারেননি। তবে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মন্ডল শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। কারণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামও দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন বলে জানা গেছে। সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডল বলেন, পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। আমিও দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেব। উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূর আলম যাদু বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাপা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। আর রংপুর-৬, পীরগঞ্জ আসনে দলীয় চেয়ারম্যান আমাকেই মনোনয়ন দেবেন এটা আমার বিশ্বাস। এখানে আগের মতোই এখনো জাতীয় পার্টি ও লাঙ্গলের ইমেজ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App