×

জাতীয়

লোকমান হত্যা: মোবারককে আরো দুই দিনের রিমান্ড

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩১ পিএম

লোকমান হত্যা: মোবারককে আরো দুই দিনের রিমান্ড
নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে অস্ত্র মামলায় আরো দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (২ নভেম্বর) দুপুরে জেলা জজ আদালতের বিচারক অনামিকা চৌধুরীর আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকমান হোসেন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোবারক হোসেন ওরফে মোবা লোকমান হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে থেকে মালয়েশিয়ায় পলাতক ছিলেন। মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মোবারক। গত ২৫ অক্টোবর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে পলাতক ছিলেন তিনি। নরসিংদীতে তাঁর মালিকানাধীন একটি জমি বিক্রি করতেই দেশে এসে আত্মগোপনে ছিলেন মোবারক। পুলিশ নজরদারি ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রুপন কুমার সরকার ও জাকারিয়া আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে প্রথমে ঢাকায় এবং পরে নরসিংদীতে তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে শহরের পশ্চিম ব্রা‏হ্মন্দী মহল্লায় অবস্থিত তার শ্বশুরের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ওই বাসা থেকে সাত রাউন্ড গুলি ও দুইটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রুপন কুমার সরকার বাদী হয়ে একটি অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওনদিনই বিকেল ৫টায় তাকে আদালতে এনে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা আক্তার ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ত্র আইনের মামলায় মোবারক হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ড দেন আর লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। দুই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়া যায়। আরো বিশদ তথ্যের জন্য আজ শুক্রবার দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনামিকা চৌধুরীর আদালতে হাজির করে পুনরায় সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসআই রুপন কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, মোবারক হোসেন মোবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে তিনি অস্ত্র মামলাসহ মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ড নিয়েও বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তা বলা সম্ভব নয়। তাই অস্ত্র মামলায় তাকে পুনরায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আর যেহেতু লোকমান হত্যা মামলাটির কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে, সেহেতু এই বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারছি না। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে আসামি মোবারক হোসেন মোবা বিদেশে পলাতক ছিলেন। বাকি ১৩ জনের সবাই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন তারা। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এতে মামলার এজহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী কামরুজ্জামান। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী। তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট আবেদন দাখিল করেন। আদালত বাদীর আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন। এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট আবেদন দাখিল করেন। এর ধারাবিকতায় কয়েক বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App