×

জাতীয়

জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে অসুস্থতার অজুহাত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩২ পিএম

জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে অসুস্থতার অজুহাত!
দুর্নীতি দমন কমিশনের তলবি নোটিশ পাওয়ার পর কেউ নিয়মিত অফিস করছেন, দৈনন্দিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের দিন হাজির না হয়ে অসুস্থতার অজুহাত দেখাচ্ছেন। লোক মারফত চিকিৎসক সনদ পাঠিয়ে সময়ের আবেদন করছেন। বিষয়টি যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের তলবে হাজির না হয়ে এভাবেই অর্ধশতাধিক হাই প্রোফাইল ব্যক্তি সংস্থাটির জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসার মতো শারীরিক অবস্থা থেকেও যারা হাজির হচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছে দুদক। পাশাপাশি মিথ্যা মেডিকেল সনদ দেয়া হলে আইনের আওতায় আনা হবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককেও। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ লেনদেন, সরকারি সম্পত্তি দখল, এলসির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচার, রাজস্ব ফাঁকি ও বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় অর্ধশতাধিক হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে তলব করে দুদক। কিন্তু দেখা যায়, দুদকের তলবে যেদিন জিজ্ঞাসাবাদ থাকে, ঠিক তার আগের দিন বা তলবের দিনে লোক মারফত চিঠি দিয়ে অসুস্থতার কথা জানাচ্ছেন। অন্যদিকে এমন ‘অসুস্থ’ অনেককেই একই দিনে রাজনৈতিক বা অন্যান্য কাজে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার কথা ছিল জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের। জিজ্ঞাসাবাদের ঠিক আগের দিন দুদকে চিঠি পাঠিয়ে নিজেকে ‘অসুস্থ’ দাবি করেন তিনি। অথচ ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে তিতাসের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমানের গত পহেলা অক্টোবর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিনই অসুস্থ বলে দুদকে চিঠি পাঠান তিনি। অথচ ওইদিন তিনি অফিস করেছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হওয়ার কথা ছিল পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া রত্নার। জিজ্ঞাসাবাদের আগ মুহূর্তে তারাও নিজেদের অসুস্থ দাবি করে দুদকে চিঠি পাঠান। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুদকের তলবে হাজির হননি বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান, তার সন্তান ফয়সাল মোরশেদ খান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিকল্পধারার মহাসচিব এম এ মান্নান, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, লা মেরিডিয়ানের স্বত্বাধিকারী আমিন মোহাম্মদসহ অর্ধশতাধিক হাই প্রোফাইল ব্যক্তি। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কেউ না আসলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে মেডিকেল সংশ্লিষ্ট বা অসুস্থতার কথা বললে তার ক্ষেত্রে পুনরায় বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাকে আবার সুযোগ দেয়া হয়। এখন যদি বার বার অসুস্থতার একই অভিযোগ দেখানো হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া সুস্থ থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতার অজুহাতে জিজ্ঞাসাবাদে যারা হাজির হননি তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেবে দুদক। দুদকের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, কেউ যদি মনে করে দুদককে ফাঁকি দিয়ে আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে, তাহলে তার ধারণা ভুল। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি জিজ্ঞাসাবাদে না আসে, তাহলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনব। মেডিকেল সনদে মিথ্যা তথ্য দেয়া হলেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অসুস্থ না হয়েও অভিযুক্তদের যারা ভুয়া মেডিকেল সনদ দিচ্ছেন তাদের একটি তালিকা আমরা তৈরি করছি। তাদের বিরুদ্ধেও আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের ‘অসুস্থদের’ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের তলবে কেউ না আসলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন। আইন অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App