×

পুরনো খবর

আ.লীগের জন্য সম্ভাবনাময় ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৫২ পিএম

আ.লীগের জন্য সম্ভাবনাময় ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি
জাতীয় সংসদের ৩৮ বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) পশ্চিম বগুড়া নামে খ্যাত আসনটিতে ১৯৭৩ সালের পর এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে না পারলেও আসনটি জেলার মধ্যে আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। মনোনয়ন সঠিক হলে এবং দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে এই আসনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অন্যদিকে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে এই আসনে কাউকে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। আদমদীঘি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৩ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ১২৫ জন আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৩ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, জার্মান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা খন্দকার আসাদুর রহমান লাইজু, দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান খান সেলিম, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট আব্দুল মতিন পিপি, আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তবিবর রহমান তবি, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক অজয় সরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইকোনসিন (স্টাউট) বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রশীদ তালুকদার এবং আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আনছার আলী মৃধার ছেলে মারুফ মৃধা। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেনÑ দুবার নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা। তবে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পলাতক থাকায় এবারে তার মনোনয়ন অনিশ্চিত। এ ছাড়াও রয়েছেনÑ আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকার ভাই আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিত তালুকদার, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদুল চৌধুরী হিরু, সদস্য এডভোকেট আতাউর রহমান খান মুক্তা এবং জেলা শ্রমিক দলের উপদেষ্টা আলহাজ সুলতান মাহমুদ চৌধুরী। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি এডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ড. এডভোকেট শামছুর রহমান। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সরকার ও জেএসডি (রব) থেকে এডভোকেট মমতাজ সুলতানা সোমা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। জামায়াত থেকে স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন দুপচাঁচিয়া উপজেলার দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল গণি মÐল। এ আসনের বর্তমান এমপি এডভোকেট নুরুল ইসলাম জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় পার্টিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। তবে এ আসনে এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। বগুড়া-৩ আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় আসন হলেও বিগত দিনে সিদ্ধান্তের কৌশলগত ভুলের কারণে আসনটি হাতছাড়া হয়েছে বলে স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের ধারণা। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মেজর (অব.) মোহাম্মদ গোলাম মওলা। এ সময় আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এলাকার জনপ্রিয় নেতা আনছার আলী মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে ৮৪ হাজার ৩১৬ ভোট পান এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মাদ গোলাম মাওলা পান ২৩ হাজার ৯৯৫ ভোট। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা ১ লাখ ৪ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের দীর্ঘদিন পর দলে ফিরলেও ২০১৭ সালে আনসার আলী মৃধা মৃত্যুবরণ করলে আওয়ামী লীগে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়। পরে বর্তমানে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর (যিনি এক সময় জাসদের নেতা ছিলেন) প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগ শিবিরে এখন চাঙ্গা ভাব। তিনি নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে শোডাউন থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। যার ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগ যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অধিক সংগঠিত বলে নেতাকর্মীরা জানান। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা যুদ্ধাপরাধ মামলার অভিযুক্ত হওয়ায় তার মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রার্থী মনোনয়নে চ‚ড়ান্ত সিগনাল না আসায় নেতাকর্মীরা এখনো উজ্জীবিত হতে পারেনি। তারপরও জামায়াতের ভোটের সমর্থন পেলে এই আসনে জয়ের ব্যাপারে বিএনপি নেতাকর্মীরা আশাবাদী। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৩ আসনে আদমদীঘি উপজেলায় ৫৭টি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৫১টি সর্বমোট ১০৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫৮৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন মো. কছিম উদ্দিন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে আব্দুল মজিদ তালুকদার, ১৯৮৬ জাসদ থেকে এ বি এম শাহজাহান ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী এ বি এম শাহজাহান, ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে আব্দুল মজিদ তালুকদার ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবারো বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার এমপি নির্বাচিত হন। মজিদ তালুকদার মারা গেলে ২০০১ তার ছেলে আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আবারো বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা জয়ী হন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত এডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App