×

জাতীয়

যে কারণে সংলাপে আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৮ এএম

যে কারণে সংলাপে আ.লীগ
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তরিক নয়- এমন দুর্নামের দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বিরোধীদেরও পানি ঘোলা করার সুযোগ দিতে চায় না। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের তুষ্টির বিষয়টিও। তাই সবক‚ল রক্ষায় কুশলী চাল দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক অঙ্গনে দারুণ এক চমক সৃষ্টি করে সাড়া দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের আহবানে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ড. কামালকে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করে দলটির এই অবস্থানের কথা জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে যেভাবে সংকট উত্তোরণে উদ্যোগী ছিলেন তিনি, এবারো সেই উদ্যোগ নিয়েছেন। সংবিধান সম্মতভাবেই ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে চান সরকারপ্রধান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে আলোচনার জন্য গণভবনে আমন্ত্রণ জানালেও প্রধানমন্ত্রীর সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সেই আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। ফলে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার অবশ্য দৃশ্যপট ভিন্ন। ড. কামাল নিজেই সংলাপে বসার জন্য চিঠি লিখেছেন শেখ হাসিনাকে। তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকলেও বিএনপিসহ ছোট ছোট আরো দুটি দল এই জোটে আছে। এ ছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা আছেন নেপথ্যে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলনে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসুরে কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারাও। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা হঠাৎ সংলাপে বসতে রাজি হওয়ার কারণ কি? এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও আছে ব্যাপক কৌত‚হল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় সংলাপের দরজা খোলা রেখেছেন। তার দুয়ার সবার জন্যই উন্মুক্ত। ২০১৪ সালে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংলাপের জন্য টেলিফোন করেছিলেন খালেদা জিয়াকে। নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেয়ার জন্য ডেকেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় বিএনপি ও খালেদা জিয়া কি ধরনের আচরণ তখন করেছিলেন, সেটি সবার জানা। পরে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে একজন মা হিসেবে আরেকজন মাকে সান্ত¦না দিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখনো তারা দরজা বন্ধ রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা অপমানিত হয়ে ফিরেছিলেন। তাই তিনি বলেছেন- বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না। তাছাড়া ওই সময় সংলাপের জন্য বিএনপি বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের কথা ছিল, সংবিধান সম্মতভাবেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। শর্ত দিয়ে কোনো সংলাপ হবে না। যা হবে সংবিধানের মধ্য থেকেই হবে। ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নীতিনির্ধারক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে, তারা কোনো শর্ত জুড়ে দেননি। আমাদের দলীয় প্রধানও সংবিধান সম্মতভাবেই তাদের সঙ্গে সংলাপে রাজি হয়েছেন। তবে এ সংলাপ সরকারের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বলেও উল্লেখ করেন কাজী জাফর উল্লাহ। তাছাড়া কোন পরিস্থিতিতে সংলাপের তোড়জোড় শুরু হয়েছে তা-ও পর্যালোচনার দাবি রাখে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার দিনই সংলাপের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন ক্ষমতাসীনরা। এর পরদিন সংলাপের আমন্ত্রণ ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামালের বাসভবনে পৌঁছে দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিলের রায়ে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাজা ৫ বছর থেকে বেড়ে ১০ করা হয়। মাঝখানে একদিন পরই গণভবনে সংলাপে যেতে হবে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে। এই পরিস্থিতি বিএনপির জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর ফলে সংলাপ নিয়ে বিএনপিতে মতবিরোধ বাড়বে। এ কারণে সংলাপের সময় বেছে নেয়াকেও শেখ হাসিনার আরেকটি কুশলী চাল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সংলাপ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের চিঠির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তোলেন। অনির্ধারিত এ আলোচনায় অন্যান্য মন্ত্রীদের মন্তব্য জানতে চান তিনি। এসময় সংলাপের পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন মন্ত্রীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট কী বলতে চায়, সেটাও শোনা উচিত। পরে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন যেহেতু সন্নিকটে। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রধানমন্ত্রী উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে যা হবে সংবিধান সম্মতভাবেই হবে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, সংলাপ হবে, এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর দলের সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে সংসদে যান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ফোন করে গণভবনে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। দলের পক্ষে থেকে দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ড. কামাল হোসেনের বাসায় চিঠি নিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি। এদিকে সংলাপে রাজি হয়ে ঐক্যফ্রন্টকে চিঠি দেয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোভাবকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ক‚টনীতিকরা। গত কয়েকমাস ধরে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি সরকার ও সরকার প্রধানের উদার মনোভাবকেও দেশের রাজনীতির জন্য ভালো বলেও মন্তব্য করেন তারা। সোমবার রাতে একটি অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে কয়েকজন বিদেশি ক‚টনীতিক এমন মনোভাব জানিয়েছেন বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতের পর সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংলাপ ইতিবাচক হবে বলে আমি আশাবাদী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App