×

অর্থনীতি

বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৫৭ পিএম

বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর  উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি
শিল্পবান্ধব বঙ্গবন্ধু সরকার পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। এই তালিকায় রয়েছে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ স্টিলস ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার লবণচোরায় অবস্থিত কোরাইসি স্টিলস লিমিটেড এবং ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত প্রিন্স আয়রন এন্ড স্টিলস ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বিএসইসি। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ স্টিলস ইন্ডাস্ট্রিজ যা পরবর্তীতে বিএসইসির অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে এটি বন্ধ করে দেয় বিএনপি সরকার। ভাড়া দেয় সোয়ান ফোম কোম্পানিকে। এখনো তারা অবৈধভাবে তা দখল করে আছে। অবশ্য এ ব্যাপারে মামলা চলছে। মামলার রায় পেলে এটি আবার চালু হবে। মূলত বিভিন্ন ধরনের সুইসসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, দরজা জানালার ছিটকিনি, কব্জা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে তৈরি হবে। অন্যদিকে খুলনার লবণচোরায় কোরাইস স্টিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। চালু অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৭৫০০ টন রড। এটিও বন্ধ করে বিএনপি সরকার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ব ও দখলে নেয়া হয়েছে। ঢাকা স্টিলের মতো একটি আধুনিক স্টিল মিল হিসেবে কোরাইস স্টিলস লিমিটেড পুনরায় চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিএসইসির আওতাধীন ঢাকার মিরপুরের প্রিন্স আয়রন এন্ড স্টিলস ইন্ডস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালে। এরশাদ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৭০০০ টন রড। প্রতিষ্ঠানটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে তা দেশের শিল্প খাতকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটছে। সরকারের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান। এসব মেগা প্রকল্পে অবদান রাখতে পারবে বিএসইসি। সূত্র আরো জানিয়েছে, বর্তমান সরকার বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ বিক্রি করেছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তেজগাঁওয়ে ৭ বিঘা জমির ওপর এটি অবস্থিত। মাত্র আড়াই কোটি টাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছিল তৎকালীন সরকার। সে সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী। জানা গেছে, ১ জুলাই ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) গঠিত হয়। শুরুতে বাংলাদেশ স্টিল মিলস্ করপোরেশন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও জাহাজ নির্মাণ করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিএসইসি কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে বিএসইসি নিজস্ব উদ্যোগে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ বেøড ফ্যাক্টরি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। যেখানে সর্বশেষ চালু প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড। সম্প্রতি ১৯৯৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া রি-রোলিং মিল ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড পুনরায় চালু হয়েছে। গত ৫ জুলাই গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানের পুনঃচালুকরণের উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইস্তেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের সব বন্ধ শিল্প কারখানা চালু হবে। এটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের অধীন ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার আগে ব্যক্তিমালিকানায় থাকাকালীন দেশের রড খাতে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা স্টিল লিমিটেড। তখন এর অধীনে কোয়ালিটি আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানি ও প্রান্তিক ট্রেডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান এমএস রড ও অ্যাঙ্গেল, সিআই (কাস্ট আয়রন) ও অ্যানামেলের তৈজসপত্র তৈরি করত। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করে বিএসইসির অধীনে দেয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিকদের মামলার কারণে দীর্ঘদিন পর ১৯৯৪ সালে এটি বন্ধের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। চালু অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির তিনটি শিল্প ইউনিট ছিল। ইউনিটসমূহে এম এস রড ও এ্যাঙ্গেল, সিআই (কাস্ট আয়রন) প্রোডাক্ট এবং এনামেলের তৈজসপত্র উৎপাদন হতো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান খান ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকা স্টিল পুনরায় চালু হয়েছে এটা দেশের শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক। মিলটিকে একটি আধুনিক স্টিল মিলস হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এটি মূলত ৩টি প্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে বর্তমানে বিএসইসির চালু প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১টি। ঢাকা স্টিলে এখন একটি ইউনিট চালু রয়েছে। তবে বাস্তবতার আলোকে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বাকি দুটি ইউনিট কোয়ালিটি আয়রন এবং প্রান্তিক ট্রেডার্স চালু সম্ভব নয়। কারণ সরকার তেজগাঁওকে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সেখানে ৩৭তলা একটি আধুনিক বাণিজ্যিক ভবন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি সরকারকে। যেখানে ভাড়া দেয়া হবে হাসপাতাল, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে ৭-৮ তলা পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, ঢাকা স্টিলের একটি শিল্প ইউনিটে এম এস রড, স্কয়ার বার এগুলো তৈরি হচ্ছে। বর্তমান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বছরে ৫-৬ হাজার টন। তবে বছরে আড়াই লাখ টন উৎপাদনের পরিকল্পনা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি তা বাস্তবায়ন হবে। ঢাকা স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের রডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমান বাজারে রডের দাম আকাশ ছোঁয়া। দেশে এখন সরকারের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প চলমান। আমরা যদি আরো ৫ বছর আগে আধুনিক স্টিল মিল চালু করতে পারতাম তাহলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ অনেকটা কমত। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিএসইসির অধীনে চালু ৮টি প্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদন করেছে ৫৯৪ দশমিক ১৭ কোটি টাকার পণ্য, যার বিক্রয় মূল্য ৭২৪ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা। এখান থেকে নিট মুনাফা হয়েছে ৭৬ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতিষ্ঠানটি জমা দিয়েছে ১৯০ দশমিক ১৪ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App