×

জাতীয়

রংপুরে আওয়ামী লীগ-জাপার স্নায়ুযুদ্ধ, আগ্রহ নেই বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৭ এএম

রংপুরে আওয়ামী লীগ-জাপার স্নায়ুযুদ্ধ, আগ্রহ নেই বিএনপির
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো কিছুটা সময় থাকলেও রংপুরের ৬টি আসন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর-৬ পীরগঞ্জ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর-৩ সদর আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে তাদের কারণে রংপুরের সবগুলো আসনে প্রভাব পড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্যদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অতীতের পরাজয়ের ধারাবাহিকতার কারণে এই জেলায় বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম নেই। মনোনয়ন নিয়েও তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। শেষ পর্যন্ত রংপুরের ৬টি আসন ভাগাভাগি হতে পারে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। বর্তমানে রংপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে ৪টি এবং জাতীয় পার্টির রয়েছে ২টি। এর মধ্যে রংপুর সদর আসনের এমপি জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও রংপুর-১ গঙ্গাচড়া আসনে এমপি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ ছাড়া রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে সেখানে নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই ৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রংপুর-৪ আসনে টিপু মুন্সী ও রংপুর-৫ আসনে এইচ এন আশিকুর রহমান অনেকটা এগিয়ে থাকলেও বাকি ৪টি আসনে প্রার্থী এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। এই ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ থাকবে নাকি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হবে তাও নিশ্চিত নয়। তবে শুধু রংপুর জেলা নয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনের মধ্যে ২১টিই দাবি করছে জাতীয় পার্টি। মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ দলের অনেকেই মনে করেন রংপুর এখনো লাঙ্গলের ঘাঁটি। এটি কেউ ভাঙতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে রংপুরে নৌকার শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলেও এবার সদর আসনটিও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদকে ছেড়ে দেয়া হবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, এরশাদের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। ২০০৮ সালে রংপুর জেলার ৬টি আসনে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই করে ৩ আসন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখনো ৪টি আসন দখলে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে ২১ আসন ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জাতীয় পার্টির জেলা সম্পাদক রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, জাপা চেয়ারম্যানের ২১টি আসন চাওয়ারও যুক্তি রয়েছে। জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার উপরেই নির্ভর করছে কোন আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে কী, থাকবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, দল এবার রংপুর-৩ সদর আসনেও প্রার্থী দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ আসনে এবারেও প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান। তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নগরীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। তারা জাতীয় পার্টিকে ছাড় না দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে চৌধুরী খালেকুজ্জামানকে এবার রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) অথবা রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসন থেকে প্রার্থী করা হতে পারে। তিনি গত দশম ও নবম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ সদর আসনে প্রার্থী হতে চেয়েও মহাজোট হওয়ার কারণে প্রার্থী হতে পারেননি। এ আসনে আওয়ামী লীগের আরো সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। রংপুর-১ গঙ্গাচড়া আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবারেও হতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু অথবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মন্ডল অথবা আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। রংপুর-৪ পীরগাছা ও কাউনিয়া আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি। তিনি এবারো নির্বাচন করবেন এ আসন থেকে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন সিরাজুল ইসলাম ভরসা ও মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল। রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনে এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে দলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন জাতীয় পার্টির জেলা সম্পাদক ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর। রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে এবারো প্রার্থী হতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে অবশ্য তিনি এ আসনটি ছেড়ে দেন। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চান পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। রংপুর জেলায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্ত কোনো প্রার্থী নেই বিএনপি ও তাদের ২০ দলীয় জোটের। তাছাড়া ১৯৯০ সালের পর এই জেলায় বিএনপি বা জামায়াতের কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। উল্টো তাদের বেশিরভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এসব কারণে রংপুরের ৬টি আসনে বিএনপির নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে ৬টি আসনেই প্রার্থী দেবে বিএনপি। এরমধ্যে রংপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন সুজন। রংপুর ২ বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার ও অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী। সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হলেও রংপুর-৩ আসনে বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এরা হলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম মন্ডল ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন। রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে লবিং করছেন এমদাদুল হক ভরসা ও কর্নেল (অব.) আবদুল বাতেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। রংপুর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডল। আর পীরগঞ্জ (রংপুর-৬) আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মন্ডল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App