×

জাতীয়

সিটিং সার্ভিস-গেইটলক প্রতারণার শেষ কোথায়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

সিটিং সার্ভিস-গেইটলক প্রতারণার শেষ কোথায়!
রাজধানীর নগর পরিবহনে বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বহুদিনের। কোনো নিয়মই পরিবহন মালিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। লোকাল বাসের রুটপারমিট নিয়ে গেইটলক, ডাইরেক্ট ও সিটিং সার্ভিসের নামে দফায় দফায় বাসভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। এখানে সরকারের নিয়মনীতির কেউ তোয়াক্কা করে না। ইচ্ছে হলেই পরিবহন মালিকরা দফায় দফায় লাগামহীনভাবে বাসভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও এব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারের অনুমতি না নিয়ে ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো নীতিমালা না থাকায় রাজধানীর গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত গণপরিবহনের রুট পারমিট নিতে হয়। একটি বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলবে, নাকি বিশেষ সার্ভিস হিসেবে চলবে তা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নিধারণ করে দেয়। মহিলা বাস সার্ভিস ছাড়া ঢাকায় বিশেষ সার্ভিস বলতে কোনো সার্ভিস নেই। গণপরিবহনের রুটের কোন স্থানের ভাড়া কত হবে তাও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত ভাড়া কিছুদিন পরই অকার্যকর হয়ে যায়। হঠাৎ করেই পরিবহন কোম্পানিগুলো ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। ভাড়া বাড়ানোর পর দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেয়া হয় না। মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তান ও মতিঝিলের ভাড়া এক মাস আগেও ১৫ টাকা ছিল। হঠাৎ করে এই রুটে চলাচলরত পরিবহন কোম্পানিগুলো সিটিং সার্ভিস, ডাইরেক্ট সার্ভিস ও গেইটলক সার্ভিস ঘোষণা দিয়ে ভাড়া ৫ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা এবং ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মিরপুর রুটের কয়েকটি পরিবহন কোম্পানিও একইভাবে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা ও ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল্লাহপুর ও এয়ারপোর্ট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিলে আসা বাসের ভাড়াও অনুরূপভাবে বেড়েছে বলে জানা গেছে। গণপরিবহন কোম্পানি মিডওয়ের বাসগুলো আগে লোকাল হিসেবে চলতো। কিন্তু হঠাৎ করেই এই কোম্পানির সব বাস এখন সিটিং সার্ভিস হিসেবে চালানো হচ্ছে। প্রথম কয়েকদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং বিকালে অফিস ছুটির পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দাঁড়ানো অবস্থায় যাত্রী পরিবহন না করলেও এক সপ্তাহ পরই এই নিয়ম পাল্টে যায়। বর্ধিত ভাড়াতেই দাঁড়ানো অবস্থায় যাত্রী পরিবহন করে লোকাল বাস হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এভাবেই চলছে থাকে। গেইটলক বা সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই এই বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে বাস কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটির পর হাতাহাতি পর্যন্ত গড়াচ্ছে। দেখা গেছে, ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি বা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা পরিবহন কোম্পানিগুলো করছে না। রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে এই অনিয়মের ব্যাপারে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এভাবে সিটিং ও গেইটলকের নামে বাস চলাচলের কারণে সব রুটের যাত্রীরা এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সকালের দিকে প্রায় প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় একমাস আগের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আশরাফুল আলম নামের এক যাত্রী জানান, গণপরিবহন কোম্পানিগুলো সিটিং সাভির্স ও গেইটলক সাভিসের নামে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। যাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিলেও নগর পরিবহন ব্যবস্থার ব্যাপারে উদাসীন। এ কারণেই এই সেক্টরে নৈরাজ্য বাড়ছে। মোজাম্মেল হোসেন নামের অপর এক যাত্রী বলেন, সরকার সমর্থক লোকজন পরিবহনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।বিআরটিএর সচিব শওকত আলী এ প্রসঙ্গে জানান, কোনো পরিবহন কোম্পানিকে সিটিং সার্ভিস হিসেবে বাস চালাতে হলে অনুমতি নিতে হবে। সরকারের নিয়মনীতি মানতে হবে। কেউ আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে পরিবহন মালিক ও পরিবহন সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন, নগর পরিবহনে সরকারের কোনো সুনিদিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে পরিবহন কোম্পানিগুলো নিজেদের উচ্ছেমতো সার্ভিস চালাচ্ছে। এভাবে সার্ভিস পরিচালনার বিষয়ে পরিবহন সংগঠনগুলোও অনেক সময় অবহিত থাকে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App