×

জাতীয়

ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা,পাচার হচ্ছে মেয়েরা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০১ পিএম

ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা,পাচার হচ্ছে মেয়েরা!
: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে দেশের মূল জনস্রোতে মিশে যেতে না পারে সেজন্য টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট। পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই তল্লাশি চালাচ্ছেন। তবে এত সতর্কতার পরও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। জোরপূর্বক জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পেশায়। স্থানীয় দোকানিরা জানান, রোহিঙ্গারা আসার পর বোরকার বিক্রি বেড়ে গেছে। ক্যাম্পের নারীরা বোরকা পড়েন। বোরকা পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাওয়ার সুবিধা আছে। জানা যায়, চলতি বছরই রাজশাহীতে বোরকা পরে পাসপোর্ট করতে গিয়ে দালালসহ পুলিশের হাতে আটক হয় এক রোহিঙ্গা তরুণী। বছর খানেক আগে ঢাকার সূত্রাপুর থানার পুলিশ একটি হোটেল থেকে ৫/৬ জন রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে। স্থানীয়রা বলছেন, সরকার রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখার চেষ্টা করলেও এত মানুষকে কোনোভাবেই এক জায়গায় আটকে রাখা সম্ভব না। দেশের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি অবস্থিত কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে। এসব রোহিঙ্গা নারীর বেশিরভাগই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাই এসব নারীকে যৌন পেশায় নামানো অনেকটা সহজ। সেই সুযোগ নিচ্ছে দালালরা। দালালরা ক্যাম্পের নারীদের ক্যাম্প থেকে বের করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে; বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকা নারীদের একটা বড় অংশ মানব পাচারের শিকার ও জোরপূর্বক নানা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পরবর্তী এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৯৯টি মানব পাচারের ঘটনা চিহ্নিত করতে পেরেছে তারা। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বাস্তব সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে। পাচার হওয়াদের মধ্যে ৩৫ জন অল্পবয়সী মেয়ে আর ৩১ জন নারী। মেয়েদের ৩১ জন এবং নারীদের ২৬ জনকে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। এদের মধ্যে ৪ মেয়ে ও ৫ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে- কিছু কিছু পরিবার তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারছে না। তাই তারা তাদের মেয়েদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজে পাঠাচ্ছে যা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এর মাধ্যমেই পাচারকারীরা ওই নারীদের পাচার করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মানব পাচারের শিকার হলেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে অল্পবয়স্ক কিশোরী ও তরুণীরা। সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই নারীদের বিয়ে বা বড় শহরে চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে পাচার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের জোরপূর্বক শ্রমিক বা যৌনকর্মী হতে বাধ্য করা হয়। বিবৃতিতে আইওমের মুখপাত্র দিনা পারমার বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, গরিব পরিবারগুলোকে ভালো কাজ দেয়ার লোভ দেখানো হয়। অনেকেই এই ফাঁদ সম্পর্কে কিছু না জেনে রাজি হয়ে যান। অনেক পরিবার ঝুঁঁকি বুঝেও রাজি হন। একজনের বিনিময়ে পুরো পরিবারকে ভালো রাখতে চান তারা। জাতিসংঘের অভিবাসী সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারে বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য পাওয়ার পরেও দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নারী ও মেয়েদের জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়াও, বাকি ১০ শতাংশকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পুরুষ ও কিশোররাও এ থেকে রেহাই পায় না। প্রায় এক তৃতীয়াংশ শরণার্থীকে দিয়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন কাজ করানো হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ৫ নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা ঠিকই যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনগণ। রোহিঙ্গারা সিএনজি, টমটম চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা দেশের অন্য এলাকাগুলোতে গিয়ে ভাষার কারণে অনেক সময় ধরা পড়লেও চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে তাদের মিল থাকায় সহজেই তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারছে। তবে রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মধুরছড়া ক্যাম্পের মাঝি (প্রধান) শফিউল্লাহ, আয়াতউল্লাহ ও কলিমুল্লাহ এবং পালংখালী ইউনিয়নের ময়নার ঘোনা ক্যাম্পের মাঝি নূর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এমন কোনো ঘটনার কথা তারা জানেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App