জাতীয় ঐক্যের শুরুতেই ভাঙন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১১:২৭ এএম
সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা, ১১ লক্ষ্য ঘোষণা
ড. কামালের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
কাগজ প্রতিবেদক : যুক্তফ্রন্টের প্রধান দল বিকল্পধারাকে বাইরে রেখে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এ ফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার কনফারেন্স কক্ষে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ জোটের ঘোষণা দেন ফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ সারা দেশে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা একযোগে সফর করে শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর আহমেদও বক্তব্য রাখেন। জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ড. কামাল বলেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, কোনো দলের স্বার্থে নয়, জাতির স্বার্থে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। জনগণের অধিকার, জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আজকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আশা করছি এটা সফল হবে। তিনি বলেন, আজকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টে বিএনপি, যুক্তফ্রন্টের আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না আছেন। আমরা আশা করি বি. চৌধুরী (অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী) ও মান্নান (আবদুল মান্নান) সাহেবের সঙ্গে যুক্ত হবেন। যারা ঐক্য ফ্রন্টের বাইরে আছেন সেসব রাজনৈতিক দল এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সংগঠন, পেশাজীবী, মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক ব্যক্তি সকলে এই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হবেন বলে আমি আশা করছি। নতুন এই জোটের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করে নাগরিকের ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ এখন দুঃসহ যাতনে পিষ্ট। সিন্দবাদের দৈত্য ঘাড়ের ওপরে বসে আছে। এই স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই আজ থেকে শুরু হলো। আমরা ধীরে ধীরে কর্মসূচি দেব। নবগঠিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের ৭ দফা : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ের নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে। নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোটকেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্র্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর ওপর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চ‚ড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চিয়তা দিতে হবে। ১১ দফা লক্ষ্য : মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা; এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতার অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা। ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা, জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয় নিরপেক্ষ, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত, দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা। সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান করা, কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারে অর্থায়নের সুনিশ্চিত করা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা। রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক বাংলাদেশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা আনা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কাযর্কর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া। সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয় এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশী সুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতা পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কাযর্কর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া। বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায় সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনে ক‚টনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরীর শর্ত