ঢাকের তালে পূজার আনন্দে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:২৪ পিএম
শত বছর ধরেই ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে এদেশের মানুষ উদযাপন করছে নানা ধর্মীয় উৎসব। বছর ঘুরে আবার আসছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ঢাকের তালে বাজবে আনন্দের জয়ধ্বনি। ধর্ম-বর্ণে মিলেমিশে আনন্দ করবে এবারের পূজায়। শোবিজ তারকাদের কয়েকজন শুনিয়েছেন পূজা নিয়ে তাদের কথা। লেখা সাজিয়েছেন হাসান আলীপীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব) দুর্গাপূজা একটি সার্বজনীন-সাংস্কৃতিক উৎসব। সব ধর্মের মানুষই মিলে মিশে আনন্দ করে। আমার কাছে পূজায় উপহার পাওয়াটা ভীষণ আনন্দের। আর ভীষণ মিস করি ছোটবেলার পূজা। অপর্ণা ঘোষ (অভিনেত্রী) আমি তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। আমাকে কুমারী সাজানো হয়েছিল। সেটা জীবনের অনেক বড় স্মৃতি। আর পূজায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর অন্যরকম আনন্দ। কিন্তু এখন সেই আনন্দ করা যায় না। এখন পূজামণ্ডপে গেলে অনেকেই এসে ছবি তুলতে চায়, কথা বলতে চায়। এতে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানো যায় না। ছোটবেলায় ষষ্ঠী থেকে দশমী চার দিনই মহা আনন্দে কাটাতাম। আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ নালাপাড়ায়। শুরুর দিন পাড়ার মণ্ডপে ঘুরতাম। সপ্তমী ও অষ্টমী তোলা থাকত বাইরের মণ্ডপের ঠাকুর দেখার জন্য। প্রতিমা বিসর্জনের দিন চলে যেতাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। এখন কাজের ব্যস্ততায় আর আগের মতো আনন্দ করা যায় না। এবারো চট্টগ্রাম যাবো। অপু বিশ্বাস (চিত্রনায়িকা) এবারের পূজাতে দেশে থাকছি না। সিঙ্গাপুরে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছি। বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে থাকবে দেশে। যখনই পূজা আসে তখন শৈশবের দিনগুলো বেশ মিস করি। বগুড়ায় কত হাসি আনন্দেই কেটেছে সেই দিনগুলো। আমরা সপ্তমী বা নবমীতে কোনো অঞ্জলি দিতাম না। আমরা শুধু অষ্টমীর সকালেই অঞ্জলি দিতাম। এই দিন শাড়ি পরত আমার দিদিরা। আমাকেও পরতে হতো। পূজা নিয়ে আরেকটি কথা বলতে চাই আমাদের বগুড়ায় দত্তদের একটা মন্দির আছে, আমরা পাঁচ-ছয় জন মেয়েরা মিলে পূজা দেখতে গেছি। ওখানে অভিজিত নামে একটা ছেলে ছিল। আমরা জানতাম না, ছেলেটা আমাকে পছন্দ করত। আমার সেদিন শাড়ি পরা ছিল। পূজা শেষে খিচুরি প্রসাদ দিচ্ছিল। ছেলেটা বড় একটা ডেচকি ভরে খিচুরি প্রসাদ বিলি করছিল। ছেলেটা হঠাৎ আমাকে দেখে, নেমে আসতে গিয়ে খিচুরির পাত্রটা নিয়ে সবার মাঝে পড়ে গিয়েছিল। তো সেই সময় এটা অনেক মজা লেগেছিল। তখন বুঝতে পারিনি, এটা কাকে দেখে! পরে জানতে পারলাম ছেলেটা আমাদের দলের এতগুলো মেয়ে দেখেই আনমনা হয়ে পড়ে গেছে! পূজা সেনগুপ্ত (নৃত্যশিল্পী) এবারের পূজাতে ঢাকাতেই থাকা হবে। তেমন আলাদা করে পরিকল্পনা করিনি। ছোটবেলায় তো এক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হতো, কি করব, কোন পোশাক পরব? এখন সেভাবে পরিকল্পনা করা হয় না। পূজা চেরি (অভিনেত্রী) এবার পূজা কলকাতায় কাটানোর প্ল্যান। এমনিতে তো বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় পূজায় কাটানো হয়। এবারো কলকাতায় না গেলে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে পূজা দেখা হবে। পূজায় সাজতে ভীষণ পছন্দ করি আমি। এবার পূজাটা একটু ব্যতিক্রম। ভক্তদের বিড়ম্বণাও হয়তো সামলাতে হবে! বিদ্যা সিনহা মিম (অভিনেত্রী) আমার মামার বাড়ি রাজশাহীতে। বাবার চাকরি সূত্রে কুমিল্লাতে থেকেছি। সেখানে দারুণ সময় কেটেছে। তবে পূজাতে রাজশাহীকে ভীষণ মিস করি। কাজিনদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটে সেখানে। এবার পূজায় একদিন ঢাকায় থেকে বাকি দিনগুলো বাগেরহাটে শিকদার বাড়ির পূজা দেখার ইচ্ছে আছে। আর ছোটবেলায় তো পূজার সময় আমার প্রধান কাজ ছিল সেজেগুজে মণ্ডপে যাওয়া। বাপ্পি চৌধুরী (চিত্রনায়ক) এবার পূজার প্লানটা একটু ভিন্ন। পূজার প্রথমদিন সকাল থেকেই ঢাকাসহ ঢাকার আশপাশে একশ কিলোমিটারের মধ্যে যতগুলো পূজামণ্ডপ আছে, সব ঘুরে দেখবো। এরপর একদিন যাবো নরসিংদীতে পূজা দেখতে। ইচ্ছে আছে বাগেরহাট যাওয়ার। বাগেরহাটের হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি অনেকগুলো প্রতিমা নিয়ে পূজার আয়োজন করে। শুনেছি, এবার ৭০১টি প্রতিমা নিয়ে এশিয়ার অন্যতম দুর্গোৎসবের আয়োজন করবে। তাই ভাবছি, এবার একদিনের জন্য হলেও সেখান থেকে ঘুরে আসবো। কিশোর বয়সে পূজার চারদিন, একেক দিন সকালে একেক মণ্ডপে অঞ্জলি দিতাম। মিশনের কুমারী পূজাটা কখনোই মিস করতাম না। তবে বেশি বেশি আনন্দ করতাম দশমীতে। পূজার আসল মজাটা হলো বাজি ফোটানোতে। চঞ্চল চৌধুরী (অভিনেতা) দশমীতে আমার অভিনীত ‘দেবী’ মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমার ব্যস্ততায় পূজার পরিকল্পনা সেভাবে করা হয়নি। এবারের পূজাতে সবাইকে বলব সিনেমা হলে গিয়ে ‘দেবী’ দেখুন। এবারে পূজায় এটাই আমার উপহার। জ্যোতিকা জ্যোতি (অভিনেত্রী) এখন ছোটদের মাঝে নিজেকে খুঁজে বেড়াই। ছোটরা যেন আনন্দ করতে পারে সেই চেষ্টা করি। পূজার আনন্দ তো আসলে ছোটবেলায়। বড় হয়ে গেলে আর সেই আনন্দ করা যায় না। ছোটবেলায় পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হতো, সেখানে অংশ নিতাম। মণ্ডপে কত নেচেছি। বড় হয়েও মণ্ডপে নেচে আনন্দ করি। কিন্তু ছোটবেলার সেই প্রাণখোলা আনন্দটা আর থাকে না। বড় হয়ে গেলে কিছু দায়িত্ব বেড়ে যায়।