×

জাতীয়

অবশেষে বি. চৌধুরী ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:০৫ পিএম

অবশেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ পড়লেন বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ও তার দল বিকল্পধারা। তাকে ছাড়াই ‘জাতীয় ঐক্য’ হচ্ছে বলে ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা' উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য ঘোষণা করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট যে প্ক্রিরয়া শুরু করেছিল তার সফল পরিণতির নাম হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমরা বিস্তারিত কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেবে।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিকল্পধারায়। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জেলার নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর ফলে বিকল্পধারায় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

বিকল্পধারার সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ আলম বাদল বলেন, ‘বি চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরী মিলে যা করছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিকল্পধারা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমরা একমত আছি।’

এর আগে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় ঐক্যের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসেন বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় বেইলি রোডে ড. কামালের বাসায় যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সেখানে তিনি ৫ মিনিট অপেক্ষা করেন। তবে বি চৌধুরী ড. কামালের দেখা পাননি। তাকে জানানো হয় বাসায় নেই ড. কামাল হোসেন। কিছুক্ষণ পরই সেখান থেকে বের হয়ে যান বি. চৌধুরী।

এ সময় মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকদেরকে বলেন, কারা জাতীয় ঐক্য চায়, আর কারা চায় না- সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর এটাও পরিষ্কার হয়ে গেলো কারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের ঐক্য নেয়ার চক্রান্ত করছে এবং মরিয়া হয়ে উঠেছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফায় যা রয়েছে- ১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা; ২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা; ৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্শ্চিত; ৪. শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল; ৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন; ৬. দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা; ৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া।

১১ লক্ষ্য

১. মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন;

২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন;

৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত;

৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা;

৫. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি;

৬. সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান;

৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন;

৮. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, নিন্ম আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন মান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ;

৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া;

১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সাথে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ;

১১. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ.ব.ম. মোস্তাফা আমীন, ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি সুলতান মোহাস্মদ মনসুর আহমেদ, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App