×

পুরনো খবর

বারবার ছোবল দিয়েছে ঘাতক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৫৫ এএম

বারবার ছোবল দিয়েছে ঘাতক
স্বাধীনতার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে। সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়নের চাকাকে পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ও লাল-সবুজের পতাকাকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় একই সালের ৩ নভেম্বর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে’ এই উদ্বৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় হামলা করে। তৎকালীন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্পেশালাইজড মরণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই হামলায় শেখ হাসিনা গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন নেতাকর্মী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছাড়াও আরো তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা। এরমধ্যে দু’বার হত্যাচেষ্টার সময় সরকারপ্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। আরেকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় ২০০১ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে। শেখ হাসিনাকে প্রথম হত্যাচেষ্টা : ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভার দুদিন আগে ২০ জুলাই সভার প্যান্ডেল তৈরির সময় ৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমার অস্তিত্ব মেলে। পরদিন গোপালগঞ্জ সদর থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরো একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার হয়। ২০০০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেট এলাকার অফিসে বৈঠক করে শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয় হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন না হলে আলেম সমাজ ও ইসলামের শত্রুরা বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলেও মত দেয় হুজি নেতারা। পরে খিলগাঁও থানা এলাকার মুগদায় আরেকটি বৈঠকে কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সে অনুযায়ী সভামঞ্চের কাছেই পুকুর পাড়ে বোমা পুঁতে রাখা হয়। বিষয়টি স্থানীয় চায়ের দোকানের কর্মচারীর নজরে আসে। খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে সেনাবাহিনী বোমা উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে ব্যর্থ হয় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার প্রথম পরিকল্পনা। দ্বিতীয়বার হত্যাচেষ্টা : ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে বোমা মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা। কিন্তু ২৭ মে সেতুর কাছাকাছি রূপসা নদীতে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে ধরা পড়ে ১৫ জঙ্গি। এভাবে ব্যর্থ হয় দ্বিতীয় দফায় হত্যাচেষ্টা। তৃতীয়বার হত্যাচেষ্টা : ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিলেটে শেখ হাসিনাকে আরেক দফা হত্যার পরিকল্পনা করে জঙ্গিরা। ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে শাহজালাল (র.)-এর মাজারে যাওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার। সেখানে ওঁৎ পেতে ছিল জঙ্গিরা। কিন্তু শেখ হাসিনা সেখানে যাননি। জঙ্গিরা খবর পায় কর্মসূচি পরিবর্তন করে শেখ হাসিনা যাচ্ছেন শাহ্ পরান (র.)-এর মাজারে। সেখানেও ওঁৎ পেতে থাকে তারা। যদিও শেখ হাসিনা শাহ্ পরানের মাজারেও যাননি। এরপর জঙ্গিদের কাছে খবর আসে শেখ হাসিনা সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভা করবেন। জঙ্গিরা তখন জনসভা স্থলের কাছেই একটি বাসায় জড়ো হয়। তবে ওই আস্তানায় বসে অসতর্কতাবশত নাড়াচাড়া করতে গেলে বোমা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়। সেই সঙ্গে ভেস্তে যায় সিলেটে হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা। সর্বশেষ ২১ আগস্ট হত্যাচেষ্টা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে চতুর্থ ও শেষবারের মতো গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা। ওই হামলায় শেখ হাসিনা গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন নেতাকর্মী। বর্বরোচিত এই হামলা মামলার অভিযোগপত্রে ২০ ও ২১ আগস্ট জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তৎপরতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, ২০ আগস্ট মুফতি হান্নানের সহযোগী আহসানউল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন ওরফে আবু জানদাল তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় যায়। সেখানে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন তাদের হাতে তুলে দেয় ১৫টি গ্রেনেড। ওই গ্রেনেডগুলো নিয়ে তারা যায় মেরুল বাড্ডায় আহসানউল্লাহ কাজলের বাসায়। সেখানে মুফতি হান্নানের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার কৌশল চ‚ড়ান্ত করে। সেই অনুযায়ী ২১ আগস্ট মুফতি হান্নান ও মাওলানা সাঈদের নির্দেশে জঙ্গিরা সরাসরি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যায়। তারা বিকাল পাঁচটা ২২ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। এই অপারেশনের কোড নাম দেয়া হয় ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App