×

জাতীয়

বরিশালে নদীভাঙনে হুমকির মুখে গুরুত্বপূর্ণ সেতুসহ স্থাপনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৪ পিএম

বরিশালে নদীভাঙনে হুমকির মুখে গুরুত্বপূর্ণ সেতুসহ স্থাপনা
প্রমত্তা মেঘনা-আড়িয়াল খাঁ-কালাবদর ও সুগন্ধা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সেতুসহ কয়েক হাজার স্থাপনা। প্রমত্তা সুগন্ধার ভাঙনে হুমকির মুখে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর পূর্বপ্রান্ত, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনে হুমকিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত এবং মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন। নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদীর অর্ধশত পয়েন্টে। আর ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গাছপালাসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব দিন কাটাচ্ছেন। নদীভাঙনে সহায়-সম্বল হারানো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে, অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে। তারা নদীভাঙন প্রতিরোধের জন্য দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। বিশেষ করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের শত কোটি টাকার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। সেতুর পাদদেশে মহাসড়কের পূর্ব পাশের সংযোগ মুখের গাইড ওয়াল ভেঙে পড়েছে নদীতে। সেতুর গার্ডার অঞ্চলও গ্রাস করছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক বাঁধের প্রায় ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, সেতুটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এটি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। সেতু রক্ষার জন্য প্রয়োজন নদী শাসনসহ আলাদা বৃহৎ প্রকল্প। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সওজকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। এ জন্য আমাদের দপ্তরে আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বরিশাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, নদীভাঙন প্রতিরোধ করা আমাদের কাজ নয়। তাই ভাঙনরোধে কোনো কারিগরি জ্ঞান কিংবা অর্থ বরাদ্দ নেই সওজের। আমরা রাস্তাঘাট মেরামত করি। সংশ্লিষ্ট দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য আর পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর প্রতিযোগিতায় এখন মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বপ্নের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতু। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ভাঙন প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে। নদ-নদী বেষ্টিত বরিশালে প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু এবার ভাঙন তীব্র হয়েছে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। মধ্য আগস্টে বরিশালের বাবুগঞ্জের মহিষাদী এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় রাশিদা-মোশারফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন। এখনো সেখানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সংলগ্ন বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা। গত কয়েক বছরে খোদ বরিশাল নগরীর রূপাতলী ধান গবেষণা সড়কের খেয়াঘাট সংলগ্ন ফকিরবাড়ী, সিকদার বাড়ি, খলিফা বাড়ি, মোল্লা বাড়ি ও খান বাড়ির বৃহদাংশ কীর্তনখোলার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনই ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে আগামীতে দপদপিয়া সেতুর পশ্চিম প্রান্ত নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু এ দুটি স্থানে নয়, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বাবুগঞ্জের রমজানকাঠী, উত্তর বাহেরচর, সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বাবুগঞ্জের চরসাধুকাঠী (সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বাড়ি সংলগ্ন), আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ, মহিষাদী এলাকায় রাশিদা-মোশারফ একাডেমি ও ক্ষুদ্রকাঠী, আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে মীরগঞ্জ বাজার, জয়শ্রী নদীর ভাঙনে মুলাদীর মৃধারহাট, নোমরহাট,চর লক্ষ্মীপুর গ্রাম ও নন্দিরবাজার, রাঙামাটি নদীর ভাঙনে বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা ও বলাইকাঠী, কীর্তনখোলার ভাঙনে সদর উপজেলার চরকাউয়া ও সাতানী এবং মেহেন্দীগঞ্জে মেঘনার ভাঙনে উলানিয়া, শ্রীপুর, গবিন্দপুর, ভাষানচরসহ জেলার অর্ধশতাধিক স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীভাঙনে এসব এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বাবুগঞ্জের মহিষাদী এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙনের কবল থেকে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষায় সড়ক বিভাগ সেখানে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে ব্লক সংগ্রহ করে নগরীর রূপাতলী ধান গবেষণা সড়কের খেয়াঘাট এলাকার মানুষ নদীভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরও ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের আশঙ্কায় দিনযাপন করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রমজান আলী প্রামাণিক বলেছেন, পাউবোর প্রকৌশলীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তীব্র নদীভাঙনকবলিত ৫০টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছেন। এসব স্থানে নদীভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি। অপরদিকে মেঘনা নদীর ভাঙনের কবল থেকে মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া রক্ষায় ৩৮৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষে শিগগিরই উলানিয়ায় নদীভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরুর কথা বলেন পাউবোর এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App