×

বিনোদন

‘তরুণদের জন্যই আবারো মঞ্চে গ্যালিলিও’

Icon

মেলা প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৪৩ পিএম

‘তরুণদের জন্যই আবারো মঞ্চে গ্যালিলিও’
দীর্ঘ ২০ বছর পর মঞ্চে ফিরেছে নাগরিকের ‘গ্যালিলিও’। ব্রেটল ব্রেখটের ‘দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি’ অবলম্বনে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত এই নাটকটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। তিন দশক আগে নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে ঢাকাস্থ জার্মান কালচারাল সেন্টারের তত্ত্বাবধানে। তখন এটি নির্দেশনা দিয়েছিল বিদেশি একজন নির্দেশক। পরবর্তী সময়ে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় নাটকটির নিয়মিত মঞ্চায়ন শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের পর নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। এবার নবরূপে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন পান্থ শাহরিয়ার। এই নাটকের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিনেতা ও নির্দেশক পান্থ শাহরিয়ার। সাক্ষাৎকার গ্রহণে শাহনাজ জাহান
এই সময়ে কেন গ্যালিলিও? নাটকটি মূলত বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর জীবনী নিয়ে লেখা। যেখানে দেখানো হয় সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থাকে। ধর্মান্ধতা, মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচারের চেষ্টা, সত্যকে প্রচার না করা বা সত্য প্রচারকারীকে নির্মম শাস্তি দেয়া। বিষয়গুলো এখনো আমাদের সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। সেই জায়গা থেকে আজকের তরুণদের এই গল্পটা আবার নতুন করে জানা জরুরি বলে মনে করি। কেন এবং কীভাবে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা প্রচার করা হয়, আমরাই বা সেটা কীভাবে গ্রহণ করি এই গল্পে সেটা বলা হয়েছে। আবার সত্য কখনো চাপা থাকে না। এটাও এই গল্পে দেখানো হয়েছে। আজকে যাদের বয়স ২০, তারা এর আগে আলী যাকের বা আসাদুজ্জামান নূরের মঞ্চ অভিনয় দেখার সৌভাগ্য হয়তো হয়নি। তাই তাদের জন্য ইতিহাস জানার পাশাপাশি এই কিংবদন্তি শিল্পীদের অভিনয় দেখতে পারাটাও সৌভাগ্য বলে মনে করি। তরুণদের জন্যই আবারো মঞ্চে গ্যালিলিও। দীর্ঘ ২০ বছর পর মঞ্চে নাগরিকের প্রযোজনায় ‘গ্যালিলিও’। এই বিষয়ে জানতে চাই? আশির দশকের শুরুতে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় নাটকটি প্রথম মঞ্চে আনে। নির্দেশনা দিয়েছিলেন আতাউর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালজয়ী প্রযোজনা। ১৯৯৮ সালে আমরা এই নাটকের শেষ প্রদর্শনী করেছিলাম। দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার নতুন করে প্রদর্শিত হলো। নাটকটির সময় ব্যাপ্তি ছিল আড়াই ঘণ্টা, এখন এটাকে দেড় ঘণ্টা করা হয়েছে। কারণ আড়াই ঘণ্টা বসে নাটক দেখার ধৈর্য হয়তো এখনকার দর্শকের নেই। এরকম একটা দর্শক নন্দিত নাটককে আবার নতুন করে মঞ্চে আনার দায়িত্ব যখন আমার কাঁধে পড়ে তখন নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আপনি নিজেও এই নাটকে একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন। সে সম্পর্কে যদি কিছু বলেন? নাটকে আমার চরিত্রটির নাম আন্দ্রেয়া। গ্যালিলিও তার ছাত্রদের মধ্যে যে ক’জন ছাত্রকে পছন্দ করতেন আন্দ্রেয়া তাদের মধ্যে একজন। যে কিনা ১৬-১৮ বছর বয়স থেকে গ্যালিলিওর সঙ্গে ছিল। তার বাড়িতে থেকেই আন্দ্রেয়া লেখাপড়া করেছে। গ্যালিলিও যখন কারাগারে বন্দি, তখন আন্দ্রেয়ার মাধ্যমেই তিনি তার লিখিত বইটি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বইটি তিনি কারাগারে লুকিয়ে লুকিয়ে লিখেছিলেন। তিনি বইটি প্রথম তার ছাত্র আন্দ্রেয়ার হাতে তুলে দেয় এবং বইটি যেন পাঠকের হাতে পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করতে বলে। আন্দ্রেয়া সেই কাজটি করেছিল। নবরূপে গ্যালিলিও মঞ্চায়নে দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন? দর্শকের মাঝে অভ‚তপূর্ব সাড়া দেখেছি। প্রদর্শনীর আগেই সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক দর্শক টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। প্রদর্শনীর আগের দিনই আমাদের টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। প্রদর্শনীতে দর্শকের এমন আগ্রহ দেখে আমরা ভীষণ আনন্দিত। দর্শকদের জানাতে চাই, এই নাটকটি নিয়মিত মঞ্চায়ন হবে। পরবর্তী সময়ে সবাইকে দেখার আহ্বান জানাই। নাট্যকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য কম মূল্যে টিকেট রাখার দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। এই বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য শুনতে চাই? আমরা নাটকের ব্যাপারেই কেন যেন আর্থিক অসচ্ছলতার দোহাই দেই। আপনি নিজেই দেখুন তো যখন একটা নৃত্যনাট্য হয়, তখন তো আমরা ২ হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে ভাবি না। এটার দাম ২ হাজার হলো কেন? আবার বাংলাদেশে সোনুনিগম এলে টিকেট মূল্য ৫ হাজার হলেও আমাদের কিছু আসে যায় না। তাহলে মঞ্চ নাটকের বেলায় এত কার্পণ্য কেন? শিক্ষার্থীরা তো সিগারেট খেয়েও অনেক টাকা খরচ করে। শুধু মঞ্চ নাটকের বেলায় ১০০ আর ৫০ টাকার টিকেট কিনতে আসলে তার মনে হয় সে স্টুডেন্ট। স্টার সিনেপ্লেক্সে ৬০০ টাকা দিয়ে ঠিকই তারা সিনেমা দেখেন। তাহলে ২০০/৩০০/৫০০/১০০০ টাকার টিকিট রেখে কি খুব অন্যায় করেছি? পৃথিবীর সব জায়গায় লাইভ পারফরম্যান্সের টিকেটের মূল্য সবচেয়ে বেশি। আমার মনে হয়, যারা এই বিতর্কটা করছেন তারা অহেতুক করছেন। থিয়েটার নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা কি? আপাতত এই নাটক নিয়েই ব্যস্ত আছি। অন্যান্য পরিকল্পনাও আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে পুরো দল গ্যালিলিও নিয়েই ব্যস্ত। আমরা নাটকটির নিয়মিত প্রদর্শনী করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App