×

বিনোদন

অপরাজিত ২৫

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:১৯ পিএম

অপরাজিত ২৫
অপরাজিত ২৫
অপরাজিত ২৫
অপরাজিত ২৫
১৯৯৩ সালে অভিষেক ঘটে তিন চলচ্চিত্র তারকা মৌসুমী, শাবনূর এবং আমিন খানের। চলতি বছর তারা তিনজনই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ২৫ বছর পূরণ করলেন। কেমন ছিল তাদের দীর্ঘ যাত্রাপথ? জানাচ্ছেন স্বাক্ষর শওকত
ঢালিউডের ব্র্যান্ড মৌসুমী মৌসুমীর প্রথম ছবি সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করে ফেলেন মৌসুমী। মডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা নায়িকা অভিষেক ছবিতেই বিপুল ভক্তশ্রেণি তৈরি করে ফেলেন। সালমান-মৌসুমী জুটির ক্রেজ তৈরি হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত থেকে’ই। ‘দেনমোহর, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘স্নেহ’ ছবিগুলো এ জুটিকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই এ জুটি ভেঙে যায়। মৌসুমীর জুটি গড়ে ওঠে ওমর সানীর সঙ্গে। এই নায়কের সঙ্গে মৌসুমী ‘আত্মঅহঙ্কার’, ‘দোলা’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘সংসারের সুখদুঃখ’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’র মতো হিট-সুপারহিট দর্শকদের উপহার দেন। কিন্তু মৌসুমীকে জুটিনির্ভর নায়িকা বলার উপায় তখন ছিল না। কারণ গোটা নব্বই দশক জুড়ে তিনি অসামান্য জনপ্রিয়তার অধিকারী ছিলেন। মৌসুমীর ক্যারিয়ারে ধীরগতি আসে ওমর সানীকে বিয়ের পর। সেই ঝিমুনিও তিনি কাটিয়ে ওঠেন মান্নার সঙ্গে ‘লুটতরাজ’ সুপারহিট হওয়ার পর। এরপর মান্নাকে পাশে পেয়ে মৌসুমীর ক্যারিয়ারে আসে ‘আম্মাজান’, ‘কষ্ট’, ‘বর্তমানে’র মতো সফল ছবি। মান্নার পাশাপাশি ফেরদৌসকে জুটি হিসেবে পেয়ে ক্যারিয়ারের অন্য রকম গতি পান মৌসুমী। এই নায়কের সঙ্গেই আসে তার ক্যারিয়ারের সফলতম ছবি ‘খায়রুন সুন্দরী’। নায়িকা হিসেবে যখন তরুণ মুখেদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তখনই তার সর্বোচ্চ আলোড়নের ছবিটি আসে। এই ছবিটির সাফল্য পুরোপুরি লুটে নেন মৌসুমী। লম্বা ক্যারিয়ারে রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। সব ধরনের ছবিই করেছেন মৌসুমী। ঘরানা বেছে বেছে ছবি করার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না। এমনকি টিভি প্রিমিয়ার ঘরানার ছবিও চুটিয়ে করেছেন মৌসুমী। এক পর্যায়ে তিনি পরিচালনায়ও নাম লেখান। যদিও এ ক্ষেত্রে কোন নজীর তিনি তৈরি করতে পারেননি। চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক, মডেলিংয়েও সব সময় ব্যস্ত সময় পার করেছেন মৌসুমী। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মৌসুমী তার সুঅভিনয় ও সৌন্দর্যেও কারণে নিজের একটি আলাদা অবস্থান ধরে রেখেছেন চলচ্চিত্র জগতে। তারকা হিসেবে তিনি সব সময়ই ছিলেন উল্লেখযোগ্য অবস্থানে। ব্যবসায়িক সাফল্যে যখন তিনি পিছু হটেছেন, তখনো তারকাসুলভ আভিজাত্যে মৌসুমীর মতো তারকা দেশে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলত তার সময়ের লড়াইয়ে টিকে যাওয়া কিছু ছবির কারণেই এই অনবদ্য অবস্থান। ক্যারিয়ারে ২৫ বছর পেরিয়েও মৌসুমীকে এখনো চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল তারকা বলে বিবেচনা করা হয়। ঢালিউডের ব্র্যান্ড তারকা বলে মৌসুমী অবিহিত করা যায়। পরিশ্রমী আমিন খান আমিন খানের প্রথম ছবি মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘অবুঝ দুটি মন’ ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর মুক্তি পায়। এ ছবিতে আমিন খানের সঙ্গে অভিষেক হয়েছিল রথির। দুই সম্ভাবনাময় মুখের একসঙ্গে শুভযাত্রা আলোচনা তৈরি করেছিল চলচ্চিত্রপাড়ায়। রথি অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। লড়াইয়ের মাঠে থেকে যান আমিন খান। তার থেকে যাওয়ারই কথা। কেননা তিনি কোমর বেধেই চলচ্চিত্রে নেমেছিলেন। ১৯৯০ সালের নতুন মুখের কার্যক্রম থেকে বাছাই হয়ে এসেছিলেন আমিন খান। ‘অবুঝ দুটি মনে’র মতো আলোচিত ছবি করার পর তিনি ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন। শুরুতে সহনায়কের চরিত্র করলেও পরে আমিন খান একক নায়ক হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যান। নব্বই দশক ফুরোলে একজন চাহিদাসম্পন্ন নায়কে পরিণত হোন তিনি। সিনেমার শীর্ষ সব পরিচালক এবং নায়িকার সঙ্গেই কাজ করেছেন আমিন খান। পরিচালকদের মধ্যে মনতাজুর রহমান আকবর, এফ আই মানিক এবং অবশ্যই মোহাম্মদ হোসেনের বিশেষ আশীর্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। নায়িকাদের মধ্যে মৌসুমী, পপি, শাবনূর, পূর্ণিমা ও মুনমুনের সঙ্গে তার জুটি গড়ে উঠেছিল। গত দশকের শুরুর দিকে আমিন খান প্রচুর হিট ও সুপারহিট ছবি বক্স অফিসে উপহার দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে চমতকার কিছু রোমান্টিক ছবিতে তিনি পারফর্ম করেছিলেন। যার মধ্যে ‘হৃদয় আমার’, ‘তোমার আমার প্রেম’, ‘তোমার জন্য ভালোবাসা’ ইত্যাদি ছবিতে আমিন খান অভিনয় করেন। আর তার সামাজিক-অ্যাকশন সফল ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রাঙা বউ’, ‘আম্মাজান’, ‘মুখোমুখি’, ‘হিরা-চুনি-পান্না’, ‘ঠেকাও মাস্তান’, ‘মরণকামড়’, ‘মগের মুল্লুক’ ইত্যাদি। আমিন যখন দুর্দান্ত দাপটে চলচ্চিত্রাঙ্গন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন সিনেমায় অসুস্থ ছবি নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছিল। তখন আমিন খান অভিনীত কিছু ছবি সমালোচনার শিকার হয়েছিল। কিন্তু আমিন খান সমালোচনা কাটিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান ধরে রাখেন। ব্যবসায়িক সফলতায় আমিন খান ওই সময় খুবই দক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু বিখ্যাত পরিচালকদের সংস্পর্শের অভাবে তার কাছ থেকে কালজয়ী কোনো ছবি দর্শকরা পাননি। কিন্তু দর্শকপ্রিয় ছবি দিয়ে দর্শকদের তুষ্ট করেছেন আমিন খান। অভিনয়ে তার আক্ষেপ একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সমসাময়িক প্রায় সবাই পুরস্কারটি পেলেও আমিন খানের কাছে ওটা অধরাই রয়ে গেছে। কিন্তু আমিন খানের সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি ক্যারিয়ারে দীর্ঘ সময় অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের সঙ্গে সিনেমা জগতে টিকে রয়েছেন। এ জগতে তার ২৫ বছর হয়ে গেছে। দুই দশকের একজন খ্যাতিমান চিত্রনায়ক রূপে তিনি এখনো আলোচিত। স্বতন্ত্র শাবনূর শাবনূরের প্রথম ছবি এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর। প্রথম ছবিতেই ব্যর্থ হোন শাবনূর। কিন্তু তিনি সিনেমা জগতে এসেছিলেন এহতেশামের মতো শিল্পী তৈরির কারিগরের হাত ধরে। ফলে প্রথম ছবিতে সফল না হতে পারলেও শাবনূর দমে যাননি। বরং এ ছবির ব্যর্থতা তাকে আরো শক্ত করেছে তার ক্যারিয়ার গড়তে। সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘তুমি আমার’ সুপরহিট হওয়ার পরই নব্বই দশকের অন্যতম প্রভাবশালী নায়িকাটির দেখা পেয়ে যায় ঢালিউড। সালমানের সঙ্গে একে একে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘বিক্ষোভ’, ‘মহামিলন’, ‘তোমাকে চাই’ সুপারহিট হলে শীর্ষ নায়িকার কাতারে চলে যান শাবনূর। এরপর তিনি অমিত হাসান, ওমর সানী, শাকিল খানসহ প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই চুটিয়ে অভিনয় করেন। নিজস্ব অভিনয় ভঙ্গি দিয়ে কোটি কোটি দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তোলেন শাবনর। কিন্তু সালমানের মৃত্যুর পর তার ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে রিয়াজের সঙ্গে জুটি গড়ে ওঠা। ‘বিয়ের ফুল’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘কাজের মেয়ে’র মতো রোমান্টিক ছবি দিয়ে শাবনূর আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেন। শুধু নায়িকা হিসেবে তিনি বড় রকমের বক্স অফিসের সাফল্যেও পরিচয় দেননি, বরং অভিনেত্রী হিসেবে বেশির ভাগ ছবিতেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন শাবনূর। একটা সময় তিনি হয়ে ওঠেন দেশের এক নম্বর নায়িকা। নব্বই দশকের শেষের ওই সময়টায় অন্য নায়িকারা শাবনূরের কাছ থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। আলোচনায়, সাফল্যে, বিতর্কে শাবনূর এক বলিষ্ঠ তারকার ভ‚মিকায় আবির্ভূত হোন। তাকে ঘিরে তখন স্বনামধন্য পরিচালকদের বৃত্ত গড়ে ওঠে। মতিন রহমান, বাদল খন্দকার, জাকির হোসেন রাজু, আজাদি হাসনাত ফিরোজদের নির্মাণকৌশলের সঙ্গে শাবনূরের পছন্দসই যোগাযোগ একটা স্বতন্ত্র যুগ তৈরি করে। এই যুগের শেষের দিকে তিনি মনোযোগী হোন চরিত্রনির্ভর ছবির দিকে। এরই সাফল্যে শাবনূর জয় করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে রোমান্টিক ছবি ছাড়াও করেছেন সামাজিক, ফোক, অ্যাকশন, পারিবারিকসহ সব ধরনের ছবি। তিনি কখনোই নায়কনির্ভর নায়িকা ছিলেন না। শুরু থেকেই শাবনূর তার পছন্দের পরিচালকদের বাইরে কাজ করতেন না। অপেক্ষাকৃত তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে তার বোঝাপড়া ছিল ভালো। তাদের নিয়ে তিনি সফলও হয়েছেন। একটা সময় সিনিয়র নির্মাতারাও শাবনূরের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হোন। ক্যারিয়ারে প্রচুর গসিপ, স্ক্যান্ডালের দেখা পেয়েছেন তিনি। অনেক প্রতিক‚লতা পেরিয়ে তবেই তাকে শীর্ষ নায়িকার আসন ধরে রাখতে হয়েছে। আজো গত তিন দশকের মধ্যে ৫ জন নায়িকার নাম উচ্চারণ করতে গেলে শাবনূরকে ভাবতে হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App