×

মুক্তচিন্তা

স্থিতিশীল শেয়ার মার্কেট বর্তমান সরকারের অবদান

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫০ পিএম

সক্রিয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রয়োজন এ জন্য যে ইস্যুকৃত এবং সরবরাহকৃত শেয়ার, বন্ড এসবের বাজার ভালো থাকলে প্রাথমিক মার্কেট সক্রিয় হবে এবং উদ্যোক্তারা আইপিওর মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের তাগিদ অনুভব করবেন। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সরাসরি পুঁজি সংগ্রহ করা যায় এ ধরনের মন্তব্য বোধ হয় অপরিপক্ব এবং অজ্ঞতা প্রসূত।

উপরোক্ত শিরোনামে অনেকে ক্ষুব্ধ হবেন, কেননা তাদের কাছে শেয়ার মার্কেটের অর্থ হলো লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। আকাশ হলো সীমারেখা, অথচ শেয়ার মার্কেট তথা স্টক এক্সচেঞ্জ হলো বাজার যেখানে শেয়ার, সিকিউরিটিজ, চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী কেনাবেচা হবে। যদিও Speculation থাকবে। তবে তারও একটা সীমারেখা থাকা প্রয়োজন। ১৯২৯ সালের The Great Crash-এর সময় Speculation এতটা ভয়াবহ হয়েছিল যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. হুভার বলেছিলেন- Speculation is far worse crime than murder for which men should be reviled and punished. বাংলাদেশে স্বল্প ব্যবধানে দুটো শেয়ার কেলেঙ্কারি ঘটল। যথা ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে। তুলনামূলকভাবে বিচার করলে দেখা যাবে যে এর ভয়াবহতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ ১৯২৯ সালের Great Crash-এর চেয়ে কম নয়।

বাংলাদেশে নিরীহ অসহায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছেন। বিশ্বখ্যাত অর্থনৈতিক সাপ্তাহিকী ‘দি ইকোনমিস্ট’ যথার্থ একে দুবারই আখ্যায়িত করেছে। Slaughter of the innocent কেউ কেউ এই বিপর্যয়ে বাইরের হাত ছিল বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য পদের মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করে যে সব মধু দেশীয় লোকের পেটে গেছে। নব্বই দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জে সদস্য পদ ৭/৮ লাখ টাকায় সীমিত ছিল। পরে তা ২০/৩০ কোটিতে পৌঁছেছিল। দুবারই একশ্রেণির শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ সরকারের কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছেন যেন অধিক অর্থ সরবরাহ করা হয় শেয়ার কেনার জন্য। অধিক মূল্যে শেয়ার কিনে তারপর কি করবে, সেদিকটার কথা তারা ভাবতেন না। দ্বিতীয় শেয়ার বাজার বিপর্যয়টা বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সময়েই ঘটে। তিনি প্রথমে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ছিলেন পরে বিষয়টা উপলব্ধি করেন। স্টক এক্সচেঞ্জে করপোরেট অনুশাসন ছিল না। যদিও কাগজে কলমে লিমিটেড কোম্পানি, আসলে এটি ছিল প্রাইভেট মেম্বারস ক্লাব। সেখানেও আবার সব সদস্য সমান সুযোগ পেতেন না বা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতেন না। জর্জ ওরওয়েলের প্রখ্যাত বই দি এ্যানিম্যাল ফার্মের প্রখ্যাত উক্তির কিছু রদবদল করে বলতে হয় যেসব সদস্য সমান তবে তাদের ভেতর কেউ কেউ বেশি সমান। সে বেশি সমান সদস্যরা স্টক এক্সচেঞ্জের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করত। একশ্রেণির সদস্য এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি যেখাবে চাইতেন, সেভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। সাধারণ বিনিয়োগকারীর কথা কেউ ভাবতেন না। শেয়ার ব্রোকারদের ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটুক, এটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কি রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তাহলে ভয়াবহ চিত্রটা পাওয়া যেত, আমার ব্যক্তিগত সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যেখানে একজন মহিলার ১২ লখ টাকার কেনা শেয়ারের মূল্য ৪ লাখ হয়েছিল। যাহোক অর্থমন্ত্রী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন যে এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিষদের আমূল পরিবর্তন আনবেন। ২০১৩ সালে স্টক এক্সচেঞ্জকে (উভয়) ডিমিউচুয়ালইজেশন করা হলো। এখন পরিচালনা পর্ষদে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য নন, এমন পরিচালকের সংখ্যা বেশি এবং চেয়ারম্যানও তাদের ভেতর থেকে নির্বাচিত হবেন। এর ফলে পরিচালনা পর্ষদ নিয়মের এবং বৃহত্তর জনস্বার্থকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। এখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যথা সময়ে ব্রোকার হাউস এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের ছত্রছায়ায় শেয়ার বিপর্যয় ঘটায় সম্ভাবনা এখন একেবারে ক্ষীণ। যা অতীতে দুবার ঘটল। বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েকটি ব্রোকার হাউস বা কোম্পানি কোনো অপকর্ম করতে গেলে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিএসইসি সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্ত থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় কথা উল্লেখ করতে হয় যা তিনি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা যেন শেয়ার কেনার আগে এর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর ও তথ্য সংগ্রহ করেন। বার্তার বক্তব্য নতুন নয়, তবে এটি যখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসে, তখন তা অধিক গুরুত্ব বহন করে। বিভ্রান্তকারীদের ভ‚মিকাও দুর্বল হয়ে পড়বে। বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছিয়ে দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয়েছে বলেই ডিএসই চীনের মতো শক্তিধর অর্থনৈতিক দেশকে পাশে পেয়েছে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে।

উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবসা চলছে অত্যন্ত স্থিতিশীলতার সঙ্গে। যে কোনো বাজারে দাম ওঠা-নামা করে চাহিদা অনুযায়ী। মনে রাখতে হবে যে দেশে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীর সংখ্যা উদারভাবে হিসাব করলে ৩০ লাখ। অর্থাৎ শতকরা ২ ভাগের কাছাকাছি। অতএব সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব।

স্টক এক্সচেঞ্জ একটি বাজার যেখানে শেয়ার সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়। এখানে যারা কেনাবেচা করতে আসেন, তারা মুনাফা অর্জনের জন্য এবং অথবা নিজের কোনো প্রয়োজনের জন্য। অতএব এই অর্থের কোনো নিশ্চয়তা নেই এর সবটুকু জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করা হবে। পুঁজি বাজারের প্রাথমিক মার্কেটে আইপিওর মাধ্যমে সরাসরি বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। সরকার এবং অন্য কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে সরাসরি বন্ড বিক্রি করতে পারে। এসব শেয়ার সিকিউরিটিজের লেনদেনের জন্য চাই একটি সক্রিয় শেয়ার মার্কেট। দেশের অর্থনীতি যদি সচল এবং সক্রিয় থাকে, তাহলে শেয়ার বাজার সক্রিয় হবে, বিপরীতটা ঘটে না। কোনো দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়লে স্টক এক্সচেঞ্জের সহমরণ হয়। ২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার সময় বিভিন্ন দেশের সরকার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ) সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ সরবরাহ করে অনেক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বাঁচানো হয়েছে। বিশ্বের কোথাও কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে একটি পয়সাও সরবরাহ করতে পারেনি। সক্রিয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রয়োজন এ জন্য যে ইস্যুকৃত এবং সরবরাহকৃত শেয়ার, বন্ড এসবের বাজার ভালো থাকলে প্রাথমিক মার্কেট সক্রিয় হবে এবং উদ্যোক্তারা আইপিওর মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের তাগিদ অনুভব করবেন। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সরাসরি পুঁজি সংগ্রহ করা যায় এ ধরনের মন্তব্য বোধ হয় অপরিপক্ব এবং অজ্ঞতা প্রসূত।

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App