হাতিরঝিলের নকশাবহির্ভূত ২৯ স্থাপনা উচ্ছেদে গড়িমসি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৬ পিএম
অপরিকল্পিত স্থাপনায় সয়লাব হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এলাকা হাতিরঝিল। সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে গত কয়েক বছরে নকশাবহির্ভূত ২৯টি স্থাপনার অনুমতি দিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁ হিসেবে নির্মিত এসব স্থাপনা হাতিরঝিলের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি করছে পরিবেশ দূষণও। বিষয়টি নিয়ে দেশের গণ্যমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। হাতিরঝিল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কমিটি এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রতিবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এ কমিটির সুপারিশের বাস্তবায়ন নেই। এ অবস্থায় গত ১০ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল প্রকল্পে থাকা মূল নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ জন্য ৭ দিন সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নগরবাসীর বহুল কাক্সিক্ষত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন।
জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্পের রাজউক অংশের প্রকল্প পরিচালক জামাল আকতার ভোরের কাগজকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। আমরা রায়ের কপিটি এখনো হাতে পাইনি। কপি পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, হাতিরঝিলে আসা দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান ইজারা দিয়েছি এটা সত্য। পরে দেখা গেছে কিছু কিছু স্থাপনা দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। এগুলোকে কীভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত করা যায় তা দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া বরাদ্দের শর্ত লঙ্ঘন করে অনেকেই নির্ধারিত স্থানের বেশি ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আমরা কাজ করছি।
সরেজমিন দেখা যায়, হাতিরঝিলের মূল নকশা ভেঙে ২৯টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি দোকানই স্থায়ী। বাকি ১৮টি দোকানের মধ্যে কয়েকটি অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। দোকানগুলো বেশিরভাগ গড়ে উঠেছে ঝিলের পাড় ঘেঁষে। অনেক দোকানি নিজেদের ইচ্ছামাফিক জায়গা ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধীরে ধীরে সবুজায়নও কমছে। তা ছাড়া খাবারের উচ্ছিষ্ট, পানির বোতল ফেলা হচ্ছে যেখানে সেখানে। অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক টিনের ছাউনি, কংক্রিট ও কাঠের পাটাতন, ত্রিপল-ছাতা আর চেয়ার-টেবিল দিয়ে দোকান সাজিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে গুলশান পুলিশ কনকর্ড প্লাজা সংলগ্ন ‘তন্দুরি কাবাব’ ও ‘ঝিলমিল’; মেরুল অংশে ‘ফুড মোবাইল’ এবং রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন ‘ফুড মোবাইল এন্ড চায়না গ্রিল’ উল্লেখযোগ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রেস্টুরেন্ট মালিক জানান, তারা ৭৫ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় এসব দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি এসব চুক্তি করা হয়েছে। এখন মাঝপথে উচ্ছেদ করলে ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী অধ্যাপক ড. মজিবুর রহমান বলেন, হাতিরঝিলের মূল পরিকল্পনার বাইরে কিছু স্থাপনা রয়েছে। এখানে এ ধরনের রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কথা ছিল না। এগুলো সরিয়ে নিতে আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল নকশার বাইরে থাকা সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হবে।
পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, হাতিরঝিলের মূল নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা অবৈধ। এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। এ নিয়ে মোটেই গড়িমসি করা উচিত নয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সাদিক শাহরিয়ারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।