ভাইরাল গানের শিল্পীরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:২৩ পিএম
প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় কোনো গান নিজের মতো করে উপস্থাপন করার চল অনেকদিনের। এই প্রক্রিয়াটিকে শ্রোতারা ‘কাভার’ বলে চেনেন। মুক্ত প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের কল্যাণে কাভারের রমরমা চলছে এখন। এমনকি পেশা হিসেবেও কাভারকে বেছে নিচ্ছেন অনেকে। আবার বিখ্যাত হয়েও অনেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। ইউটিউবে ভাইরাল গানের জনপ্রিয় কিছু শিল্পীর কথা এই প্রতিবেদনেআরমান আলিফ ‘অপরাধী’ শিরোনামের একটি গান গেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গীত ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছে আরমান আলিফ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েই গানটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। ইউটিউবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘অপরাধী’। এই এক গানই তারকা বানিয়ে দিয়েছে গানটির গায়ক, গীতিকার ও সুরকার আরমান আলিফকে। আরমান বলেন, ‘আমি একেবারে সহজ কথায় গান করার চেষ্টা করি। এই গানটির কথা ও সুর দুটিই অনেক সহজ। যারা শুনেছেন, পছন্দ করেছেন হয়তো গানটির কোনো না কোনো অংশ তাদের জীবনের সঙ্গে মিলে গেছে।’ ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক এই তরুণের। জন্ম নেত্রকোনায়। গান করার স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘চন্দ্রবিন্দু’। ‘অপরাধী’ দিয়ে হিট হলেও গান প্রকাশ করছেন আরো আগে থেকে। এই বছর কুরবানি ঈদে প্রকাশ হলো আরমান আলিফের নতুন গান ‘নেশা’। জাহিদ ‘মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা’ গানটির মধ্য দিয়ে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা পায় জাহিদ। সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়া মানুষদের গান শোনানোটাই ছিল জাহিদের কাজ। শ্রোতাদের মধ্যে অনেকে খুশি হয়ে তাকে ৫/১০ টাকা দিতেন। একদিন জাহিদের গান শুনে ইমরান হোসাইন নামের এক পর্যটক তা ভিডিও করে নেন। সেই ভিডিও ছাড়া হয় ইউটিউবে। রাতারাতি তারকা বনে যায় জাহিদ। ফেসবুক-ইউটিউবে শুরু হয় তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ জাহিদ ও তার গান দিয়ে নির্মিত হয় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও। অনেক দিন পর এই বছর কুরবানি ঈদে ধ্রুব মিউজিক থেকে প্রকাশ হয় জাহিদের ‘পান’ শিরোনামে একটি গান। এরই মধ্যে এই গানটি পেয়েছে জনপ্রিয়তা। টুম্পা আরমান আলিফের ‘অপরাধী’ গানের কভার করে আলোচনায় চলে আসে কণ্ঠশিল্পী টুম্পা খান সুমি। এক কভার গান তাকে রাতারাতি খ্যাতি এনে দিল। মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে মিরপুরে বাসা নিয়েছেন। নিত্যনতুন কাজের প্রস্তাব পাচ্ছেন। ২০১৪ সাল থেকে অন্যদের গান গেয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতেন টুম্পা। শোনার সময় গানের তালে গিটার বাজান। ভিডিওর জন্য একটি ক্যামেরাও আছে তার। বাসার সোফায় বসে ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করেন। টুম্পা বলেন, ‘সুরটা তোলার পর মনে হলো আমি এটার ফিমেল ভার্সন করে গাইব। এ জন্য মাইয়ার জায়গায় পোলা শব্দটি বসিয়ে দিই। এরপর আমার অন্য গানের মতো ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করি।’ এই গানের পর টুম্পাকে ডেকে পাঠান গীতিকার কবির বকুল। তার কথায় ‘ও মাই লাভ’ চলচ্চিত্রের একটি গানে প্লেব্যাক করেন টুম্পা। গানটিতে টুম্পার সহশিল্পী কিশোর। এ ছাড়া ফরহাদের সুরে ‘অষ্টপ্রহর’ শিরোনামে আরেকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তালিকায় আছে নাম ঠিক না হওয়া আরেকটি গান। মাহতিম শাকিব মাহতিম শাকিব ভাইরাল হয়েছেন সত্তর দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মানসী’ ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ দিয়ে। চলতি বছরের ২২ মে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করেন তিনি, যা খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। মাহতিম বলেন, ‘আমার উৎসাহের জায়গাটা পেয়েছি সনমপুরীকে দেখে। তারা পুরনো গানগুলোকে নতুন করে গাইছে। সেটা শ্রোতারাও গ্রহণ করছে। আমি চেয়েছি আমাদের জনপ্রিয় ছবির গান নিয়ে কাজ করতে।’ রোজার ঈদে প্রকাশ হয়েছে তার প্রথম মৌলিক গান ‘বুকের বাঁ পাশে’ নাটকের টাইটেল। এই গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এরই মধ্যে। রাফসান জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া দুটি গান গেয়েছেন ১৩ বছরের রাফসান। ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’ গানটি তো রীতিমতো অনলাইনে ‘ভাইরাল’। তার ব্যান্ডও আছে ‘ধোঁয়া’। গান গাওয়ার পরপরই দেখা করার সুযোগ পেয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে। নেত্রকোনা থেকে ছুটে এসেছে রাফসান ও ব্যান্ড ধোঁয়ার সদস্যরা। নেত্রকোনাতেই বেড়ে উঠছে রাফসান। জেফার বাংলাদেশে পশ্চিমা গানের কাভারের জন্য ইউটিউবে জনপ্রিয় হয়েছেন জেফার। তার জনপ্রিয় কিছু কাভারের মধ্যে রয়েছে মাইকেল জ্যাকসনের ডার্টি ডায়ানা, অ্যাডেলের স্কাইফল, ক্রাই মি আ রিভার ও সে সামথিং। জেফার ইংলিশ গান কাভার করতেই পছন্দ করেন। ইংলিশ গানের অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন তিনি। এমন আরো আছে, ব্যান্ড ‘কুঁড়েঘর’। অনেকটা ঘরোয়া আড্ডার আসরের মতো করেই বিভিন্ন গান কাভার করে তারা। তাদের কাভার করা সারা জাগানো গানের তালিকায় রয়েছে ‘দেহঘড়ি, দিল্লিতে নিজামউদ্দিন, পাল তুলে দে সহ বেশ কিছু লালনগীতি।’