×

মুক্তচিন্তা

সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:২৮ পিএম

পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সুলভ ও সহজলভ্য করার কথা অনেকদিন থেকে বলা হলেও তা হচ্ছে না। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। গ্যাসের চাহিদা মেটানো ও গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান এবং খনন করে গ্যাসের মজুদ বাড়াতে হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সর্বোপরি গ্যাসের সাশ্রয়ী ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে রাজধানীতে গ্যাস সংকট কেটে যাবে- এমনই প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছিলাম। এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু তারপরও গ্যাস সংকট কাটছে না কেন? বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীসহ আশপাশের কিছু এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক বেলা গ্যাস থাকলে আরেক বেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের দেখা মিলছে না অনেক এলাকায়। গ্যাসের অভাবে শুধু রান্নাবান্নাই বিঘ্নিত হচ্ছে না, ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। সামগ্রিক এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

রাজধানীতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। সেখানে তিতাস গড়ে ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি থাকছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এমনিতেই সারা বছর গ্যাসের সংকট থাকে। জানা গেছে, হাতিরপুল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, পশ্চিম আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, আদাবর, পশ্চিম ধানমণ্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার, শাঁখারীবাজার, কামরাঙ্গীরচর, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, দক্ষিণ বনশ্রী, রামপুরার শিমুলবাগ, আশীষ লেন ও উলন রোড এলাকার বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট তীব্র রূপ নিয়েছে। এ সব এলাকার কোথাও কোথাও সারাদিন চুলা জ্বলে না। আসে সন্ধ্যার পর। কিন্তু তাও ১/২ ঘণ্টার জন্য। এটা সত্যি রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায়ই প্রায় সারা বছর আবাসিক সংযোগের পাইপলাইনে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ থাকে। আর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংকট লেগেই থাকছে বছরের পর বছর। গ্যাসের মজুদ সংকটের চেয়ে এ ক্ষেত্রে সঞ্চালনগত সমস্যাই বেশি দায়ী। দেখা গেছে, একটা সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এক ধরনের পাইপ বসানো হয়েছে, সময়ের ব্যবধানে ওই এলাকার গ্রাহক বেড়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ। ফলে আগের সেই সংকীর্ণ পাইপলাইন দিয়ে ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব নিয়ে লেখালেখিও সব সময়ই হচ্ছে। তারপরও কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। গ্যাস সংকটের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা আশার বাণী শুনিয়ে বলেছিলেন, গ্যাস সংকট দূর করতে এলএনজি গ্যাস (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে সংকট আর থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, গত মাসে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পরও গ্যাস সংকট দূর হয়নি। বর্তমানে প্রতিদিন ২৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের গ্যাস ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রচুর অপচয় ঘটে। এই অপচয় ঠেকাতে মিটার সিস্টেম চালু করা বা এ রকম কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সুলভ ও সহজলভ্য করার কথা অনেকদিন থেকে বলা হলেও তা হচ্ছে না। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। গ্যাসের চাহিদা মেটানো ও গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান এবং খনন করে গ্যাসের মজুদ বাড়াতে হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সর্বোপরি গ্যাসের সাশ্রয়ী ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App