×

জাতীয়

পদ্মার পেটে গেছে মন্দির পূজা উদযাপন অনিশ্চিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

পদ্মার পেটে গেছে মন্দির পূজা উদযাপন অনিশ্চিত
জমি-জিরাত ও ঘরবাড়ির পাশাপাশি নড়িয়াবাসীর হাসি-আনন্দও কেড়ে নিয়েছে সর্বগ্রাসী পদ্মা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো যেন হাসতে ভুলে গেছে। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের আগেই তাদের আনন্দ বিসর্জন হয়ে গেছে পদ্মায়। শারদীয় দুর্গোৎসবের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। বাঁশ বেঁধে প্যান্ডেল তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেছে। চারদিকে উৎসব উৎসব আমেজ। কিন্তু এসবের কোনো প্রভাবই নেই নড়িয়ায়। গত বছরও এই এলাকায় জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ বছর একেবারেই ভিন্ন চিত্র। ঐতিহ্যবাহী কেদারপুর রাম ঠাকুর সেবা মন্দিরটি এবছর পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। সাধুর বাজারের দাসপাড়ায় ছিল ৭০ থেকে ৮০টি হিন্দু পরিবার। কিন্তু নদী ভাঙনের পর এই পরিবারগুলো ছন্নছাড়া অবস্থায়। অনেকে এলাকা ছেড়েই চলে গেছেন অন্যত্র। দাসপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন সরস্বতী দাস। ৭০ বছর বয়সী এই নারীর দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে নদীর পাড়ে। লাঠি হাতে ধীর পায়ে ভাঙা ঘরবাড়ি পেরিয়ে নদীর পাড়ে আসেন। দূরে একা দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন নদীর দিকে। ডান হাত তুলে কপালে ঠেকান আর বিড়বিড় করেন। এলাকাবাসী জানান, সরস্বতী দাস প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা মন্দিরে যেতেন। মাথা ঠেকাতেন দেবালয়ে থাকা দেবতার পায়ে। সেই অভ্যাসবশত তিনি এখনো নদীর পাড়ে এসে মন্দিরের উদ্দেশে প্রণাম করেন। অসুস্থ সরস্বতী দাসের কথা জড়িয়ে যায়। জড়ানো কণ্ঠেই তিনি বলেন, আমার ঘরবাড়ি, জমি নিছে পদ্মা। মন্দিরটাও গেছে। রক্ষা করতে পারলাম না। গীতা দাস (৫২) বলেন, ‘নিজেগর থাকারই তো ঠিক নাই। পূজা হইবো কেমনে?’ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন তুলসী দাস (৩০), নিরাশা মন্ডল (৫০) ও শোভা রানী দাস (২৮)। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রত্যেকেই। তারা জানান, যারা উদ্যোগী হয়ে পূজার আয়োজন করত তাদেরও ঘরবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। মন্দিরটিও নেই। তাই পূজার কোনো তোড়জোর নেই এই এলাকায়। এখনো পর্যন্ত পূজার জন্য কোনো জায়গা নির্ধারিত হয়নি। পূজা হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। পূর্ব কেদারপুরের রায় বাড়িতে রয়েছে একটি কালী মন্দির। রতন কুমার রায় জানান, এই মন্দির প্রায় একশ বছরের পুরনো। রায়বাড়ীর বউ রুপালি রানী রায় বলেন, বিয়ে হয়ে এই বাড়ি আসছি প্রায় ১৮ বছর হয়। আসার পর থেকেই দেখছি এই মন্দিরে নিত্য পূজা হয়। এলাকার লোকজনও আসেন। এখনো মায়ের নিত্য পূজা দেই। কিন্তু যে হারে নদী ভাঙছে মন্দিরটা রক্ষা হবে কিনা বলতে পারছি না। হাত তুলে একটি জায়গা দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমাদের পূর্ব পুরুষের সমাধি ছিল। সেগুলোও নদীতে ভাঙছে। কত জাঁকজমক করে এই এলাকায় পূজা হতো। এবছর কোনো উদ্যোগই নাই। নদী ভাঙনে আমাদের সব আনন্দ বিসর্জন গেছে। মূলফৎগঞ্জ বাজারের ছোঁয়া টেলিকমের স্বত্বাধিকারী বলরাম দাস আক্ষেপের সুরে বলেন, এক সময় এখানকার মানুষের চোখে মুখে হাসি ছিল। এখন ওই মানুষগুলোর চোখে জল। মুখে দুঃখের ছায়া। পূজার আনন্দ নেই। পূজা হবে কিনা তাও জানা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App