×

জাতীয়

ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে ভিড়, হাহাকারে ভাসছে তীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:১৬ পিএম

ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে ভিড়, হাহাকারে ভাসছে তীর
পদ্মার নৈসর্গিক রূপ নিয়ে অনেক কাব্য হয়েছে কালে কালে। কখনো পদ্মা প্রমত্তা, কখনোবা শান্ত। তবে পদ্মার সঙ্গে ‘সর্বনাশী’ আখ্যাটাই যেন বেশি মানায়। কেননা পদ্মার ভাঙন হাজার হাজার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ। পদ্মার পানির সঙ্গে যেন মিশে আছে লাখো মানুষের অশ্রু। নড়িয়াবাসী এর রাজসাক্ষী। মুলফৎগঞ্জ বাজারের দিকটায় পদ্মার যে ঘূর্ণিটা এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে তা যেন তার ক্ষুধার কথাই জানান দেয়। সর্বগ্রাসী পদ্মার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত এই জনপদ দেখতে প্রতিদিনই নদীর পাড়ে ভিড় করে উৎসুক জনতা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি ও বয়সের উৎসুক জনতা নদীর পাড়ে ভিড় করেন। তবে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। উৎসুক জনতা এদিক-সেদিক একটু তাকিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেলফি তুলতে। কেউ কেউ ফোনে পদ্মার ধ্বংসযজ্ঞ ভিডিও করেন। ভাঙনের শিকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেও কেউ কেউ দুদন্ড দাঁড়িয়ে দেখে যান পদ্মার ধ্বংসলীলা। বুকভরা হাহাকার নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরাও আসেন নদীর পাড়ে। বেশিরভাগ সময়ই তারা উদাস চোখে তাকিয়ে থাকেন পদ্মার দিকে। কখনোবা আফসোস করে স্মৃতিচারণ করেন। পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ভিটেমাটি আর ফসলি জমির অবস্থান খুঁজে ফেরেন কিংবা নদীর দিকে আঙুল তুলে পাশের জনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কোথায় ছিল তার বসতবাড়ি। নিঃস্ব মানুষগুলো এভাবেই খুঁজে ফেরেন তার অতীতকে। তেমনি একজন পিঞ্জির আলী (৫২)। আর্দ্র কণ্ঠে তিনি বলেন, রাক্ষসী পদ্মা এত খায় তবুও ওর ক্ষুধা মিটে না। পদ্মার এত ক্ষুধা কেন? খাইলো জমি-জিরাত। বাপদাদার ভিটা। মাথা গোঁজার ঠাঁইও নিল এটুকু বলেই চোখ মোছেন পিঞ্জির আলী। এদিকে লোকজনের সমাগমকে কেন্দ্র করে ফেরিওয়ালারা সেখানে নিয়ে বসেছেন বাদাম, বুট, পাপড়, আচার, আইসক্রিমসহ নানা খাদ্যসামগ্রী। বাদাম বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া (৫১) বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। বয়সও হইছে। দূরে খুব একটা যাই না। এলাকায়ই থাকি। এইখানে প্রতিদিনই দেখি লোকজন আসে। তাই এই এলাকায়ই থাকি। বিক্রিও খারাপ হয় না।’ নড়িয়া থেকে মুলফৎগঞ্জের যাত্রী নিয়ে এসেছিলেন অটোচালক ইদ্রিস আলী (৪৫)। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে তিনিও খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে দেখে নেন পদ্মার সর্বনাশী রূপ। ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গাড়ি নিয়া মুলফৎগঞ্জ প্রতিদিনই আসি। কিন্তু ভাঙনের পর এইখানে (উপজেলা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে) আসা হয় নাই। আজ আইলাম।’ আসাদ, রুবেল, শাহীন, সোহেল নড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজ শেষে পড়ন্ত বিকেলে তারা এসেছিলেন মুলফৎগঞ্জ বাজারে। এসেই মোবাইল ফোনে তুলতে লাগলেন সেলফি। ওদের কেউ কেউ আবার তাৎক্ষণিকভাবে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। জাজিরায় খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন সুমন, সোমা ও রিমা। সেখান থেকে এসেছেন পদ্মার ভাঙন দেখতে। কেন এসেছেন জানতে চাইলে সোমা বলেন, নদীভাঙনের খবর প্রতিদিনই টিভি ও পত্রিকায় দেখছি। নিজ চোখে দেখব বলেই আজ এখানে এসেছি। তবে এসে নদীর সৌন্দর্যের চেয়ে ভয়ঙ্কর রূপটাই দেখলাম। মানুষগুলোর কষ্ট সত্যিই অবর্ণনীয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বলেন, নদীভাঙনের ফলে পুরো হাসপাতাল ক্যাম্পাসই ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিদিনই লোকজন ভিড় করেছে। হাসপাতালের একাংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে। একাংশ নদীতে হেলে আছে। বাকি অংশেও ফাটল ধরেছে। উৎসুক লোকজন এসেই ছবি তোলা শুরু করে। এমনও হয়, ভাঙা ভবনেও যেতে চায়। তখন আশপাশের লোকজন তাদের বাধা দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App