×

ফিচার

স্কুটি নিয়ে সাজেক ভ্যালিতে রোমা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৩০ পিএম

স্কুটি নিয়ে সাজেক ভ্যালিতে রোমা
আতিকা রোমা। একজন নারী বাইকার। বাইক নিয়ে যার অনেক স্বপ্ন। ইতোমধ্যে দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা থানচি থেকে আলীকদমের মাঝে ডিম পাহাড় অতিক্রম করেছেন ১১০ সিসির একটি স্কুটি চালিয়ে। এবার রোমা স্কুটি নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু স্থান সাজেক ভ্যালি। রোমা স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলাদেশের মেয়েরা ঝাঁক বেঁধে স্কুটি বা মোটরসাইকেল চালিয়ে নদী, সমুদ্র, পাহাড় জয় করে নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াবে। তারা স্কুটি চালিয়ে নিজেদের গতি বাড়াবে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার পথ তৈরি করবে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের অন্যতম বাইকিং গ্রুপ টিম এবিএসের ছয় সদস্য ঢাকা থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে যাত্রা করে রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালির উদ্দেশে। এই পাঁচ জন বাইকারের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন ছিলেন রোম। ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালিতে যেতে এই বাইকাররা ব্যবহার করেছেন ঢাকা-কুমিল্লা-খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা হয়ে সাজেক। মোট যাত্রাপথ প্রায় ৬৬০ কি.মি.। তবে উঁচু নিচু, আঁকাবাঁকা রাস্তার কারণে সাধারণ সময়ের চেয়ে সময়টা অনেক বেশি লাগে। বলা হয় দেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর এবং একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর রাস্তাগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার পথটি অন্যতম। মোটরসাইকেলে পুরুষ বাইকাররা এ পথে যাত্রা করলেও নারী বাইকারদের মধ্যে প্রথম এ পথ পাড়ি দিয়েছিলেন টিনা চাকমা। এরপর স্কুটি নিয়ে গেলেন আতিকা রোমা। রোমার জানান, গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই যাবার পথে বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ি রাস্তায় দুর্ঘটনায় বাম হাত ভাঙছিল রোমার। এরপর ডাক্তারের কড়া নির্দেশ এক মাসের মধ্যে কোনো বাইক ট্যুর নয়। এই একটা মাস খুব কষ্টে কেটেছে তার। গত তিন মাসে রোমা তার দলের সঙ্গে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটার সমুদ্রে, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরে এসেছেন স্কুটি চালিয়ে। রোমা বলেন, আমি একটা বিষয় দেখিয়ে দিতে চাই যে স্কুটি চালিয়ে একজন মেয়ে দেশের যে কোনো জায়গায় যেতে পারে। তা হোক সমুদ্র, হাওর, নদী বা পাহাড়, সব খানেই। তাই বলে ভাঙা হাত নিয়ে এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে রোমা বলেন; ভাঙা হাত একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল নিশ্চই। কিন্তু দিনের পর দিন দূরে স্কুটি না চালাতে পারলে খাবার হজম হয় না। অস্থির লাগে। বলতে পারেন অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতেই দূর-দূরান্তে যাই। পথটা তৈরি করি আগামী দিনের নারীদের জন্য যারা দল বেঁধে দূর-দূরান্তে বেড়াতে যাবে। এটা একটা পাগলামি বলতে পারেন। আমি সত্যি এই স্বপ্নটা দেখি। আর স্বপ্নটা দেখি জন্যই মেয়েদের জন্য স্কুটি চালান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘যাব বহুদূর’ শুরু করেছি। যদিও বিভিন্ন ঝামেলার কারণে গত দুই মাস এর কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে অচিরেই আবার এই প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছি। এত উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় ভয় লাগে কি না জানতে চাইলে রোমা বলেন, না ভয় লাগে না। বরং ভালো লাগে। আমি জানি কতটুকু স্পিড দিলে পাড়ি দেয়া সহজ হবে। একজন বাইকার হিসেবে এটা বুঝতে পারাও একটা দক্ষতা। আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমি খুব আপসহীন। তাই প্রচন্ড গরমেও রাইডিং জ্যাকেট, হ্যান্ড গ্লাভস, লেগ গার্ড, ভারি জুতা এবং সঠিক হেলমেট পরে তবেই যাত্রা করেছি। আর জ্যাকেটের নিচে ভাঙা হাতটা একটি সোল্ডার প্রোটেক্টর দিয়ে শক্ত করে বাধা ছিল। যাত্রা পথে চ্যালেঞ্জ কী ছিল জানতে চাইলে রোমা বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেনাবাহিনীর স্কডের টাইম ধরা। আমরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম সকাল ৭টায়। দিনে দুবার সেনাবাহিনীর স্কড ধরতে হয় এবং অন্য সময়ে নিজের ইচ্ছামতো সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছান যায় না। বেলা ১১টা এবং দুপুর তিনটা এ দুটো সময়েই কেবলমাত্র যাওয়া যায়। তাই ঢাকা থেকে বলা যায় একেবারেই বিরতিহীনভাবে চালিয়ে আমরা দুপুর ২টার মধ্যে দীঘিনালা উপজেলার আগে সেনাক্যাম্পে পৌঁছে যাই। কম বিরতি হওয়ায় হাতে প্রচন্ড ব্যথা হয় ঠিকই, কিন্তু সময়মতো পৌঁছে যাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত আমরা যেতে পারি। রাস্তাগুলো অদ্ভুত রকমের। কোথাও টানা খাঁড়াভাবে উঠতে হবে তো কোথাও টানা খাঁড়াভাবে নামতে হবে। আর রাস্তাজুড়ে অসংখ্য ডানে বামে বাঁক। সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার শেষ তিন কি.মি. পথ পুরোটাই সাপের মতো এঁকেবেঁকে ঘুরে ঘুরে ওপরে উঠে গেছে। আমি ধীরে ধীরে ওই রাস্তাটা পার হই। ওপরে ওঠার সময় লক্ষ্য করি আমার স্কুটির গতি ঘণ্টায় ২০ কি.মি. নেমে এসেছে। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমি তা পার হতে পারব। ফেরার দিন এই রাস্তাটা যেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। নামার সময় দেখি স্কুটি স্টার্ট অবস্থায় নামতে গেলে পিক আপে হাত ঠেকলেই গতি বেড়ে যাচ্ছে। তখন চলন্ত অবস্থায় আমি বাম হাত দিয়ে স্কুটির স্টার্ট বন্ধ করে দেই যাতে এটি একা একাই গড়িয়ে নেমে যেতে পারে এবং সেভাবেই এই ভয়ঙ্কর রাস্তাটি কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পাড়ি দিয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App