×

ফিচার

বিয়েতেই কি নারীর মুক্তি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৪ পিএম

বিয়েতেই কি নারীর মুক্তি?
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন মনীষী ও কবিরা নারীর রূপ-সৌন্দর্যের বন্দনা করে রচনা করেছেন গান; গল্প; কবিতা। কিন্তু বাস্তবে নারীকে কতটা মূল্যায়ন করা হয়েছে? নারী প্রকৃতি, নারী সৃষ্টি, নারী কমল, নারী বসন্ত, নারী রঙিন, নারী চিরসবুজ এভাবে নারী হাজার উপমায় বন্দী হয়ে এসেছে। এসব উপমা নারীর সান্ত্বনা মাত্র। একজন মা যখন জানতে পারেন তার গর্ভের সন্তানটি মেয়ে তখন থেকেই তার চিন্তা শুরু। যতটা না মেয়ে বলে চিন্তা হয় এর চাইতে বেশি চিন্তা কন্যা সন্তানটি দেহরক্ষা ও নিশ্চিত জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। কন্যা সন্তানটি যখন শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়ে রঙিন স্বপ্নের ডানা মেলে দিকদিগন্তে উড়তে চায় তখনই বিপত্তি শুরু। সমাজের লাখটা বাঁকা কথা যেন প্রস্তুতই থাকে। মেয়েটি যদি চঞ্চন হয় তবে এর মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। সামাজিক শৃঙ্খল নামে শিকল বেঁধে দেয়ার প্রয়াস শুরু হয় ওইটুকু বয়সেই। ‘মেয়ে এখন বড় হচ্ছে সামলে রাখো; ঠিকমতো দেখেশুনে রাখো। না হয় হাত ফসকে যাবে’। এসব কথা শুনেই কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখে মেয়েটি। নানা গুঞ্জনে মুখরিত হতে থাকে চারপাশ। মেয়েটি কারো সঙ্গে ঘুরছে কিনা! কতগুলো ছেলে বন্ধু আছে! প্রেম করে কিনা এমন অনেক প্রশ্নের নজর প্রতিনিয়ত তীরবিদ্ধ করে মেয়েটিকে। পরিবার থেকেও সমাজের চিন্তা যেন অনেক বেশি। বিয়ের ক্ষেত্রে তো ভাবটা এমন হয় যে, ‘যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া পড়শীর ঘুম নেই’। এভাবে একটা মেয়েকে প্রতিনিয়ত আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়া হয় সে একজন নারী। তার নিজের মতো বাঁচার অধিকার নেই। তিল তিল করে মেয়েটি নানা প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে পড়ালেখা শেষ করে যখন চাকরি কিংবা নিজের পছন্দের প্রফেশনে প্রবেশ করে তখন শুরু হয় কানাঘুষা। ‘মেয়ের ইনকাম খাওয়ার জন্য মেয়ের বিয়ে দেয়া হচ্ছে না।’ যদিও এতটুকু জায়গায় পৌঁছানোর আগেই অনেক মেয়েকে হার মানতে হয় জীবনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের পড়ালেখা কালীন বিয়ে হয়ে যায়। তাদের আর জানার সুযোগ হয় না স্বপ্ন কী, জীবন কী। আর যে মেয়েটি এসব এড়িয়ে এতদূর এসেছে তাকে সবসময় কথার সম্মুখীন হতে হয়। ‘বিয়ের বয়স চলে গেল, মনে হয় কোনো সমস্যা আছে।’ এরপর প্রশ্ন উঠে চরিত্র নিয়ে। মনে হয় এই চরিত্র শুধুই যেন নারীদের আছে। পুরুষ চরিত্রের বাইরে। আজও আমরা নারী পুরুষের জায়গা সম অবস্থানে দেখতে চাই না। আজো আমরা চরিত্রের দোহাই দিয়ে নারীর চলার পথকে সংকীর্ণ করে রেখেছি। আমরা নারী মুক্তি বলতে আজো বিয়েকে মনে করি। কন্যাদায়গ্রস্ত বলি। কেন কন্যা দায়ের হবে? কন্যাও মানুষ। পুরুষের মতো মেয়েদেরও জীবন আছে, মন আছে, বাঁচার ইচ্ছে আছে, স্বপ্ন আছে, মেধা আছে মনন আছে, আছে সৃষ্টিশীলতা। একটা ছেলেকে যেভাবে বড় করা হয় জীবন গড়ার প্রয়াসে ঠিক মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই। মেয়েটির ক্ষেত্রে তার বিয়ের জন্য সঞ্চয় নয় বরং ছেলেটির মতো মেয়েটির জীবন গড়ার জন্য, উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য সর্বোপরি তার জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে সঞ্চয়টা করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App