×

জাতীয়

চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নৈরাজ্য সামাল দেবে কে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:১৪ পিএম

চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নৈরাজ্য সামাল দেবে কে!
প্রায় তিন দশক পর চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে জামায়াত-শিবিরের একাধিপত্য ভেঙে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই ছাত্রলীগই আবার নিজেদের অভ্যন্তরীর কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে এখন কলেজে এবং আশপাশ এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রামের বর্তমান নগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও এসব নেতারা তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর ফলে চট্টগ্রাম কলেজে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘাত, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম কলেজের পাশে অবস্থিত মহসিন কলেজ ও ৩টি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান চকবাজার থানার ওসিকে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর থানা-পুলিশ এ ঘটনায় দুজন অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল শনিবারও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। সংঘর্ষ এড়াতে ক্যাম্পাসে চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের সামনে শিক্ষার্থীরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে, অস্ত্রের মহড়া দেয়, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশের নীরব ভ‚মিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। তবে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইতোমধ্যে নগরীর সদরঘাট থানার শাহজাহান হোটেল থেকে মো. ইমরান (২৩) ও নগরীর রাজাপুকুর লেইন থেকে মো. সাব্বির সাদিক (২৭) নামে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের সামনে অস্ত্র প্রদর্শনের পরও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ওই সময় পুলিশ সেখানে ছিল না। পুলিশের অবস্থান থেকে দূরে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গ্রেপ্তার সাব্বির সাদিক নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘোষিত কমিটির পদত্যাগকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, কমিটিতে থাকা অনেকে ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রত্ব নেই এমন অনেককে কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমি এই কমিটি মানি না তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দস্তগীর চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু অছাত্র রাস্তায় এসে বিশৃঙ্খলা করছে। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। ঘোষিত কমিটির অনেকে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কলেজের কমিটিতে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের কোনো ছেলে আসার প্রশ্নই আসে না। যারা অভিযোগ করছে এটা সম্পূর্ণ অসত্য। কমিটিতে কেবল যারা ছাত্রলীগ করে তাদেরই স্থান দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম কলেজ। ১৯৮৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। ছাত্রশিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হওয়া ছাত্রলীগের প্রায় তিন দশক ধরে কোনো কর্মকান্ডই ছিল না ওই কলেজে। জানা যায়, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ থেকে শিবিরকে বিতাড়িত করতে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা নূর মোস্তফা টিনু অনুসারীরা এক জোট হয়ে কাজ করেন। কিছুদিন নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলেও বিভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে উভয় গ্রুপ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়ার পর থেকেই সিটি মেয়র আ জ ম নাছির সমর্থিত ছাত্রলীগ নামধারীরা এ অরাজকতার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App