×

জাতীয়

জামায়াতকে বগলে রেখে ঐক্যের পথে বিএনপি চূড়ান্ত ঘোষণা কাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪০ পিএম

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আগামীকাল শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে ঐক্যের ঘোষণা দেবেন তিনি। জাতীয় ঐক্যের এই নয়া প্লাটফর্মে জামায়াতকে বগলে রেখেই কৌশলে সেই ঐক্যের পথে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, যে কোনো মূল্যে ঐক্য গড়তে সব দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বিএনপি। গত বুধবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চ‚ড়ান্ত হয়। এর আগে ড. কামালের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে একান্ত বৈঠক করেন বিএনপির এক সিনিয়র নেতা। ওই বৈঠকেই যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির বিভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় দলই পরস্পরের দাবিগুলোও মেনে নেয়। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নতুন নয়। তবে আশা করি দ্রুতই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। অনেকের সঙ্গেই আলোচনা চলছে। সময় নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রট গঠন নিয়ে জামায়াত ছাড়ার ইস্যুতে টানাপড়েনের মুখে পড়ে বিএনপি। ঐক্য গঠনে দলটিকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত ছুড়ে দেন ফ্রন্টের নেতারা। তবে শেষ সময়ে এসে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। ড. কামালের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বিএনপির ওই নেতা জামায়াতের বিষয়টি তুলে ধরেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, জামায়াত বিএনপির জোটসঙ্গী, মূল দল নয়। বিএনপিতে তাদের অবস্থান অতটা মজবুত নয়। কারণ তাদের নিবন্ধনই নেই। এমন অবস্থায় তাদের থাকা না থাকা সমান। সুতরাং তাদের নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনাই প্রাধান্য পেতে পারে না। পাশাপাশি ঐক্যনেতাদের ১৫০ আসনের দাবি কমিয়ে আনা হয়েছে ৫০ আসনে। তবে ড. কামালকে নেতৃত্বে রেখে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে পাশ কাটানো হলে বিএনপির বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য থেকে সটকে পড়তে পারেন এই সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তার দল বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী। এমনকি জামায়াতকে সঙ্গে রেখে কোনোভাবেই বিএনপির সঙ্গে একত্রে ঐক্য করবে না দলটি। জানা গেছে, আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীতে মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়ে দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধ হয়ে পথচলায় অঙ্গীকার করবেন ড. কামাল হোসেন। সূত্র জানায়, গত বুধবার সমাবেশে বিএনপির এক প্রতিনিধি দলকে ইতোমধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ রয়েছেন সেই প্রতিনিধিদলে। আমন্ত্রণ পাওয়ার পরই সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দাওয়াতপ্রাপ্ত নেতারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের পক্ষ থেকে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনা, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি কী করবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার তুলে ধরা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া চ‚ড়ান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি কিছু মৌলিক ইস্যুতে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য করছে। তবে কখন কি ঘোষণা হবে সেটা আমার জানা নেই। এ ছাড়াও সমাবেশে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতারা যোগ দেবেন। সমাবেশের প্রস্তুতির বিষযে জানতে চাইলে গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার ফাইনাল ধাপ আসছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আশা করছি আগামী সমাবেশের পরে সবাই একাত্ম হয়ে দাবি আদায়ে কাজ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, মহানগর নাট্যমঞ্চের পরিধি ছোট হওয়ার কারণে আপাতত আমরা মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছি। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারা দেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করব। সূত্র জানায়, সম্প্রতি নিউইয়র্ক-লন্ডন যাত্রার আগে ড. কামালের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। আলোচনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন তিনি। মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী উদারপন্থি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে অটল সিদ্ধান্তের কথা জানান তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে জোটের নেতাদের সঙ্গে বসে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও ঐক্য টিমে বিএনপিকে সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে চান তিনি। সেই তাগিদ থেকেই জোট নেতাদের সঙ্গে ‘ফাইনাল ডিল’ করার তাগিদ দেন তিনি। বাতলে দেন কিছু দিকনির্দেশনা। সেই মোতাবেক দল নির্বাচনে যাবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বা মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে। নির্বাচনী অন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্বে থাকবেন ড. কামাল হোসেন। ক্ষমতায় গেলে দলের পরিচালনার মূল নেতৃত্বে থাকবেন তারেক রহমান। সরকারের প্রধানও হবেন ড. কামাল হোসেন। জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতি মামলায় সাজা পেয়ে তিনি জেলে আছেন। খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারের পর থেকেই ড. কামালের সঙ্গে সখ্য বাড়ে বিএনপির। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে দলটির নেতারা মাঝেমধ্যেই পরামর্শ নিতেন ড. কামালের। দিন দিন সখ্য আরো বাড়তে থাকে। ৩ এপ্রিল অসুস্থ মির্জা ফখরুলকে হাসপাতালে দেখতেও যান ড. কামাল। এরপর তার সঙ্গে প্রায়ই বসতেন বিএনপির নেতারা। গত কোরবানির ঈদের দুয়েকদিন আগে ড. কামালের কাছে ১০ দফা প্রস্তাব দেয় বিএনপি। এই প্রস্তাবের সূত্র ধরেই পরবর্তী আলোচনা সামনে এগিয়ে নেয় দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর আমরা ড. কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দেব। যুক্তফ্রন্টের সবাই যোগ দেবে। আমরা চাই, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা। সব দলকে নিয়ে ঐক্যের সবকিছু এত তাড়াতাড়ি চ‚ড়ান্ত হবে আমরা নিজেরাও বুঝতে পারিনি। জামায়াতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই জামায়াত ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকুক। বিএনপি তাদের কীভাবে রাখবে সেটা তাদের বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App