×

জাতীয়

২০২০ সালের মধ্যে সব ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত: পূর্তমন্ত্রী

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:২২ পিএম

২০২০ সালের মধ্যে সব ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত: পূর্তমন্ত্রী

পরিবেশ রক্ষায় আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে যেভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে তাতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই ইট ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ইট ভাটার উপর বেশি বেশি কর আরোপ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সমস্ত ইট ভাটা বন্ধ করা উচিত। ইটের পরিবর্তে হলগ্রাম বা কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত এবং দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জনিয়ার্স লিমিটেড (এসইএল) ও আবাসন নিউজ এর সহায়তায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক অমিতোষ পাল। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসইএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ রেডিমিক্স কংক্রিট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী ম ইনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান, আদিলুর রহমান।

পরিবেশ রক্ষায় ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লক খাতকে জনপ্রিয় করতে কমপক্ষে দশ বছর ট্যাক্সমুক্ত ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী। তিনি বলেন, কংক্রিট ব্লক খাতকে ১০ বছরের জন্য সম্পূর্ণভাবে ট্যাক্স হলিডে দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাহলে সবাই দাবিত হবে এর পেছনে, ইটের ভাটা সব চলে যাবে। ইটের ভাটা যারা করে, তাদের উপর ট্যাক্স বেশি করে চাপান।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে বলব রাস্তা নির্মাণে ইটের খোয়ার ব্যবহার বন্ধ করুন। ইটের খোয়ার পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করুন। ইটের খোয়ায় নির্মিত রাস্তার স্থায়ীত্ব অনেক কম। কোথাও ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তা করলে দেখা যায় ৬ মাসের মধ্যে সেগুলো গলে যাচ্ছে অথবা গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আর কংক্রিটের ব্লক দিয়ে রাস্তা করলে তার স্থায়ীত্ব দীর্ঘদিন হয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ইটের ব্যবহার বন্ধ করে ব্লকের ব্যবহার করছে। তাহলে আমরা কেন ব্লকের ব্যবহার করতে পারব না। আমাদেরও ইটের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এ বিয়য়টি আমি সংসদেও বলেছি। সরকার ইতিমধ্যে ব্লকের ব্যবহার শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হচ্ছে তার সবটাই ব্লকের ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালীতে ১০টি বিল্ডিংয়ের কাজ ব্লকের মাধ্যমে করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আমি সরকারের লোক হয়েও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে ব্লক বানাতে যে কাচামালের প্রয়োজন হয় তার ওপর টাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে সমস্ত সরকারি ও আধা সরকারি ভবনে ইটের ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২০ সালের পর ঢাকা সহ সব বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২২ সালের পর সকল জেলা শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি ইটের বিকল্প যেকোনো প্রকার ব্লক তৈরির ফ্যক্টরিকে ন্যূনতম দশ বছরের জন্য সব প্রকার ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ভবন নির্মাণে বালি, সিমেন্ট ও নুড়ি পাথর দিয়ে ব্লক ব্যবহার করছে। এতে করে একদিকে যেমন কমছে কার্বন নির্গমন অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে ফসলি জমি। আমাদের দেশে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নদী থেকে ড্রেজিং করা বালির সঙ্গে সিমেন্ট এবং পাথর কুঁচি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এসব ব্লক। যা পোড়ানোর প্রয়োজন নেই। ইটের চেয়ে বহুগুণ কার্যকরীসম্পন্ন এই কংক্রিট ব্লক টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।দেশের সার্বিক পরিবেশ ও ফসলি জমি রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা আশা করি, বর্তমান জনবান্ধব সরকার একটি সময়োপযোগী নীতিমালা গ্রহণ করে ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App