×

জাতীয়

নদ-নদীর পানি বাড়ছে, বাড়ছে ভাঙনও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৪৩ পিএম

নদ-নদীর পানি বাড়ছে, বাড়ছে ভাঙনও
নদ-নদীর পানি বাড়ছে, বাড়ছে ভাঙনও
যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বেড়েছে নদীভাঙন। ফলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় নদীভাঙনে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধের প্রায় ১০ মিটার ধসে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
জামালপুুর : জেলার ইসলামপুরের উলিয়ায় বন্যার পানির প্রবল তোড়ে যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধের প্রায় ১০ মিটার ধসে গেছে। গত রবিবার সকাল থেকে বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়তে শুরু করায় লোকালয়ে পানি প্রবেশের আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বাঁধের ধসে যাওয়া অংশে বালির বস্তা ড্রাম্পিং শুরু করেছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫৫ কোটি টাকার ব্যয়ে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানি বাজার থেকে ইসলামপুর উপজেলা হয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন পর্যন্ত স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। সিসি ব্লকের এই বাঁধের নির্মাণ কাজ গত বছর শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধের ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়াঘাট এলাকায় রবিবার ভোর থেকে সিসি ব্লকে ধস নামে। যমুনা নদীর পানির প্রবল স্রোতে বাঁধের প্রায় ১০ মিটার স্থানজুড়ে সিসি ব্লক নদীগর্ভে দেবে যায়। উলিয়া পাইলিং ঘাট ও বাজার এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাঁধের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের কাছে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনের পর দিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরো জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধ না করা হলে স্থানীয় উলিয়া বাজারসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জনবসতি যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে একই বাঁধের পাথর্শী ইউনিয়নের মরাডুবি ঘাট এলাকার ৩টি স্থানে কমপক্ষে ২৫ মিটার বাঁধের সিসি ব্লক যমুনা নদীতে ধসে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের ওই অংশে জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করে সাময়িকভাবে বাঁধের ধস রোধ করে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধসের খবর পেয়ে ইসলামপুর উপজেলা প্রশাসন ও জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি টিম রবিবার সন্ধ্যা থেকে বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে জামালপুর পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী বলেন, উলিয়া বাজারের পেছনে বাঁধ রক্ষায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করা যায় ভাঙন রোধ হবে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেওয়ানগঞ্জ ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানী নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমন পানিতে ডুবে গেছে। গতকাল সোমবার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টের যমুনা নদীতে ২৪ ঘণ্টায় ২৯.৫৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বাড়বে বলে জানান স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানিতে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন সড়ক তলিয়ে গেছে। চুকাইবাড়ি, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, চর আমখাওয়া, ডাংধরা ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় সদ্য রোপণকৃত রোপা আমন তলিয়ে যায়। দেওয়ানগঞ্জে বন্যার সংবাদ পেয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হাসান, বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌ-থানার ওসি আ. হান্নান, ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার পদ্মা ও পাগলায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার পাকা, দুর্লভপুর, উজিরপুর ও ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাকা ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। ৪ ইউনিয়নে ৪০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত মানুষদের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ না হওয়ায় বন্যার্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, পদ্মা বিপদসীমার .৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২-১ দিনের মধ্যে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। গত কয়েকেদিন ধরে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ৪ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাকা ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, এ ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া তাদের চলাচলের পথ নেই। নলক‚পগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে না। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণের দাবি করেছেন। এদিকে রবিবার বিকেলে পাকা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম। এ সময় বন্যাকবলিত মানুষের খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া তিনি সবাইকে পানিবাহিত রোগ, সাপের কামড় থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আসলাম হোসেন, পাকা ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানসহ ওয়ার্ড সদস্যরা। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) : উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি আরো বেড়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের নিম্নাঞ্চলের বিশাল জনপদ। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির এ ধারা আরো ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা গুচ্ছগ্রাম, কাবিলপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা, জিয়াডাঙা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম গাবগাছি, উত্তর খোলাবাড়ি ও বাজে ফুলছড়ি এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের শিকার লোকজন তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপরে চলে যাওয়ায় চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে রোপিত উফশী আমনের ফসল অধিকাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, অব্যাহত নদীভাঙনে এবারের বন্যায় উড়িয়া ইউনিয়নের একটি গুচ্ছগ্রামের একশ পরিবারসহ ৩ শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের তালিকা করে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App