×

জাতীয়

গুজব প্রতিরোধে সতর্ক হতে হবে গণমাধ্যমকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:০৯ এএম

গুজব প্রতিরোধে সতর্ক হতে হবে গণমাধ্যমকে
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা নতুন নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও তারা বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে। তাই কোনো গুজব ছড়ানোর আগেই সত্যটা তুলে ধরা জরুরি। এই কাজে গণমাধ্যম কর্মীদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে বগুড়ার শেরপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (আরডিএ) ভোরের কাগজের প্রতিনিধি সম্মেলন-২০১৮ এর শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মুকুল শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. হাবিবর রহমান, টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ড. হোসনে আরা বেগম, আরডিএর মহাপরিচালক ড. এম এ মতিন এবং বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সত্য ও মিথ্যা সংবাদ। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে চাঁদে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখা ও সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের সময় এই গুজব ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চক্রান্তকারীদের এসব গুজব প্রতিরোধে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে গণমাধ্যম কর্মীদের। কারণ বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাসের সময় গণমাধ্যমের কারণেই দেশের মানুষ সত্য জানতে পেরে প্রতিহত করেছিল। তাই বর্তমানে দেশের ১ হাজার ২২০টি পত্রিকা, ৩০টি টিভি চ্যানেল ও ২২টি এফএম রেডিওর প্রতিটি কর্মী যদি নিজ নিজ এলাকার খবরের সত্যতা যাচাই করেন তাহলে আর গুজব ছড়াতে পারবে না। এ ছাড়া গুজব প্রতিরোধে কাজ করবে সরকারের আলাদা সেলও। গণমাধ্যমের জবাবদিহিতার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ২টি শব্দ বেশ প্রচলিত রয়েছে। ‘নিউজ খাওয়ানো’ ও ‘ধূসর নিউজ’ প্রচার। যেটাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করানো বলে। কারণ অনেকে মনে করেন সরকারের পক্ষে লিখলে সেটি সরকারি আর বিপক্ষে লেখলে অন্য কিছু হয়ে যায়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। অন্য দল তাদের নিউজ প্রকাশের বেলায় যে অধিকার পায় আমরাও সেই সমান অধিকারটুকুই চাই। সুতরাং ধূসর পথে হাঁটা যাবে না। যারা এটি করেন তারা হলুদ সাংবাদিকতাকে উসকে দেন মাত্র। তারানা হালিম আরো বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ঠিকই কিন্তু তার নেতৃত্বকে হারাইনি। কারণ বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেগুলোই বাস্তবায়ন করছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। নুরুল ইসলাম ওমর এমপি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, দেশ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই, বঙ্গবন্ধু ও সাধারণ মানুষের স্বপ্ন বাস্তাবায়ন করতে চাইÑ তাদের জন্য এই অনুষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণমাধ্যম ছাড়া আমরা যে দেশের স্বপ্ন দেখি সেটি বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রচার ও প্রসার না হলে মানুষের ভাগ্য বদলও হবে না। সুতরাং গণমাধ্যমকে মুক্তভাবে মতপ্রকাশ করতে দিতে হবে। যাতে দেশের উন্নয়নে কোনো ধরনের ত্রুটি হলে তারা সঠিক পথ দেখাতে পারে। মো. হাবিবর রহমান এমপি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নে কৃষিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে কৃষির পাশাপাশি সমবায়ের ওপর জোর দেয়া উচিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আরো পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি। শ্যামল দত্ত বলেন, ’৭৫-এর কাল অধ্যায় পেরিয়ে যে গণমাধ্যমগুলো যাত্রা শুরু করেছিল ভোরের কাগজ তার মধ্যে অন্যতম। মুক্ত চিন্তা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল চেতনা নিয়ে ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ভোরের কাগজ। এখনো মূল আদর্শকে ঠিক রেখে স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাচ্ছে পত্রিকাটি। তাই সামনের দিনগুলোতে যতই বাধা আসুক সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে যে দুইটি বিষয় সামনে আসে সেগুলো হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। আমরা আর ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র পারাপারের বাংলাদেশ দেখতে চাই না। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই বাংলাদেশ চাই। যার ফল আজকের পদ্মা সেতু ও স্যাটেলাইট। সুতরাং বর্তমান নেতাদের উচিত হবে বিলবোর্ডের রাজনীতি বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া। ড. এম এ মতিন বলেন, বঙ্গবন্ধু উত্তরবঙ্গের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ১৯৭৪ সালে ১২০ একর জমির ওপর এই পল্লী উন্নয়ন একাডেমি গঠন করেছিলেন। তারপর থেকেই জনসাধারণের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এসময় তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন। ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, ভোরের কাগজ মানুষের আবেগ-অনুভ‚তি ও জাতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে। যা সবাইকে উৎসাহিত করে। দেশকে গণতন্ত্রের পথে থাকতে সহায়তা করে। মকবুল হোসেন বলেন, ভোরের কাগজ অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিপক্ষে সব সময় সোচ্চার। তবে, এগুলোর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজও বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে। কারণ একটি অশুভ শক্তি সব সময় অপচেষ্টা চালিয়ে চাচ্ছে। সম্মেলনের শুরুতে ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে অতিথিদের সম্মাননা জানান ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। প্রতিবারের মতো এবারের সম্মেলনেও গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য সাপ্তাহিক আজকের শেরপুর পত্রিকার সম্পাদক মুন্সী সাইফুল বারী ডাবলু, ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সিরাজগঞ্জের জোনাল ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল আলমকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ব্যবসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ঢাকাস্থ বৃহত্তর বগুড়া যুব উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন গাবতলী প্রতিনিধি আবু মুসা। এ ছাড়াও সংবাদসহ সামগ্রিক কর্মতৎপরতা বিবেচনায় জেলা ও উপজেলার ২৭ জন প্রতিনিধিকে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি সম্মাননা দেয়া হয়। তারা হলেন, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মো. অলিমুজ্জামান, সাভারের কাগজ প্রতিবেদক মো. অজিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আফজাল হোসেন (পন্টি), জামালপুরের কাগজ প্রতিবেদক দুলাল হোসেন, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি আবদুস সোবাহান, চাঁদুপুরের কচুয়া উপজেলা প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান, কুমিল্লার কাগজ প্রতিবেদক মো. ফিরোজ মিয়া, রাঙ্গামাটির কাগজ প্রতিবেদক নন্দন দেবনাথ, বগুড়ার জেলা প্রতিনিধি মুহা. বাদল চৌধুরী, বগুড়ার গাবতলী উপজেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু মুসা, রাজশাহীর কাগজ প্রতিবেদক সাইদুর রহমান, সিরাজগঞ্জের কাগজ প্রতিবেদক হেলাল উদ্দিন, মৌলভী বাজার জেলা প্রতিনিধি সালেহ এলাহী কুটি, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর উপজেলা প্রতিনিধি স্বপন কুমার বর্মন, মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গলের কাগজ প্রতিবেদক বিকুল চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন, রংপুর জেলা প্রতিনিধি ফেরদৌস আহম্মেদ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, রংপুরের কাগজ প্রতিবেদক হাসান গোর্কী, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা প্রতিনিধি জিকরুল হক, বাগেরহাটের কাগজ প্রতিবেদক মিজানুর রহমান আকন, যশোর চৌগাছা উপজেলা প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান রিন্টু, খুলনা প্রতিনিধি বাবুল আক্তার, যশোর জেলা প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন, বরিশালের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হারুন অর রশিদ মৃধা, বরিশাল গৌরনদী উপজেলা প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার পাল, পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি অতুল চন্দ্র পাল। সম্মেলনের শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App