সংকট নিরসনের উদ্যোগ কাজে আসছে না
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৪৩ পিএম
দেশের আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি। বছরে বছরে বেড়েই চলেছে মামলাজট। এই জট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে এত অল্পসংখ্যক বিচারক দিয়ে মামলার জট কমানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া আইনজীবীদের ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ, বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন, সময়মতো সাক্ষী হাজির করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে মমলার জট সৃষ্টি হয়ে থাকে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে (সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং অধস্তন আদালতসমূহ, ট্রাইব্যুনাল, সিএমএম ও সিজেএম আদালত এবং অধস্তন আদালতসমূহ) সব মিলিয়ে মোট ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে মোট ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৫টি মামলা রয়েছে। বিচারিক আদালতে দেওয়ানি মামলা ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩৬টি। ফৌজদারি মামলা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৯টিসহ মোট সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৫টি।
এদিকে হাইকোর্টে বিচারকের সংখ্যা কত হবে তা সংবিধানে নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৯৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক সংকট রয়েছে। তাই বিচারক সংকটে সময়মতো বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দিনে দিনে মামলার জট বাড়ছে। এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের
আপিল বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ২৬টি। অপরদিকে চলমান ফৌজদারি মামলা ৬ হাজার ৩৫১টি। অন্য মামলা ১১৬টি। মোট ১৯ হাজার ৪৯৩টি মামলা আপিল বিভাগে। যদিও চলতি বছর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৪৯২টি। এদিকে, বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ১২ হাজার ২০৫টি। রিট ৭৮ হাজার ৯৩৯টি।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম বলেন, পুরনো গতানুগতিক ব্যবস্থাপনায় কোনোভাবেই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিপক্ষদের নোটিস দেয়া, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলা শুনানির জন্য কজলিস্টে আনা ও প্রযুক্তিনির্ভর করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে, একজাতীয় মামলায় আগে দেয়া রায় অনুসরণ করে রায় দেয়ার বিধান চালু করতে হবে। তাহলে মামলাজট অনেকাংশে কমে আসবে।
মামলাজট সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ভোরের কাগজকে বলেন, আদালতের মামলার জট অনেক পুরনো। বিভিন্ন কারণে স্বাধীনতার পর থেকে মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ, বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন হওয়া, সময়মতো সাক্ষী হাজির করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে মমলার জট সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালতে মামলার জট কমাতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার খুবই আন্তরিক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।