শোলাকিয়া হামলার চার্জশিট দাখিল, বিচারকাজ ত্বরান্বিত হোক
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:২৫ পিএম
জঙ্গিরা যেন আর কোথাও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের। জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরো সুপরিকল্পিত-সুসমন্বিত করার পাশাপাশি জঙ্গিদের অর্থের উৎস ও রাজনৈতিক মদদ শনাক্ত করে তা বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব, শোলাকিয়া মামলার বিচার যাতে দ্রুত নিষ্পন্ন হয় তার জন্য সচেষ্ট থাকবেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযুক্ত পাঁচ জঙ্গি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে- এ প্রত্যাশা সবার।
চাঞ্চল্যকর শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৪ জনের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত ১৯ জন বিভিন্ন সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া হামলার দুই বছরেরও বেশি সময় পর এই চার্জশিট দেয়া হলো। বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনায় অভিযোগপত্র জমা হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়ায় একধাপ অগ্রগতি বলা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে টাঙ্গাইলে অভিযানে নিহত জঙ্গি মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে সুজনের ভাড়াটিয়া বাসায় শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। পরে ২০১৬ সালের ২৪ জুন রাজধানীর বসুন্ধরায় অ্যাপোলো হাসপাতালের পেছনে তানভীর কাদেরীর বাসায় হামলার পরিকল্পনা হয়। ওই পরিকল্পনায় রাজীব গান্ধী, তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, নূরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, তানভীর কাদেরী, খাইরুল ইসলাম ওরফে বাঁধন ওরফে পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিমল ওরফে নাহিদ, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের ও মেজর জাহিদ উপস্থিত ছিল। হামলার তিন দিন আগে ৪ জুলাই মিরপুর শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় নূরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান ও রাজীব গান্ধী এই তিন জঙ্গি শোলাকিয়া হামলার বিষয়ে আরো একটি পরিকল্পনা মিটিং করে। ওই মিটিংয়েই শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে হত্যা করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়, শোলাকিয়া হামলায় খরচের সব টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সিরিয়া, সৌদি আরব ও পাকিস্তান থেকে আসে। এ ছাড়া ভারত থেকে আসে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জালাই ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথের আজিম উদ্দিন হাইস্কুল সংলগ্ন সবুজবাগ সংযোগ সড়কপথে জঙ্গি হামলার সময় পুলিশ ও জঙ্গি সংঘর্ষে গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক নিজ ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ছাড়া এ ঘটনায় জঙ্গিদের চাপাতির কোপে জহুরুল ও আনসারুল নামে দুই পুলিশ কনস্টেবল ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হয় এবং ১০ পুলিশ সদস্য ও চার মুসল্লিসহ ১৪ জন গুরুতর আহত হয়। গুলশান হামলার পরপর শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো কয়েকটি জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়েছে। আরো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। জঙ্গিরা যেন আর কোথাও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের। জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরো সুপরিকল্পিত-সুসমন্বিত করার পাশাপাশি জঙ্গিদের অর্থের উৎস ও রাজনৈতিক মদদ শনাক্ত করে তা বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব, শোলাকিয়া মামলার বিচার যাতে দ্রুত নিষ্পন্ন হয় তার জন্য সচেষ্ট থাকবেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযুক্ত পাঁচ জঙ্গি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে- এ প্রত্যাশা সবার।