×

জাতীয়

দেশের অর্থনীতি বদলে দেবে বে টার্মিনাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩১ পিএম

দেশের অর্থনীতি বদলে দেবে বে টার্মিনাল
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরে গত অর্থবছরের ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৫৪ টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস) কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হলে ২০২২ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরকে বর্তমানের চেয়ে সাড়ে ১০ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করতে হবে। এ অবস্থায় নতুন আশা জোগাচ্ছে সমুদ্র তীরে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্বিতব্য ‘বে টার্মিনাল’। বর্তমানে বন্দরের অপারেশনাল কাজের জন্য যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে তার চেয়ে ৬ গুণ বেশি জায়গায় উত্তর হালিশহরে বঙ্গোপসাগরের তীরেই তৈরি হতে যাচ্ছে আধুনিক ও যুগোপযোগী এই বে টার্মিনাল। এটির নির্মাণ শেষে ওই টার্মিনালের মাধ্যমেই এক বছরে পণ্য হ্যান্ডলিং করা যাবে কমপক্ষে ৩ মিলিয়ন টিইইউএস কন্টেইনার। যাতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে দ্বিগুণেরও বেশি। তাই ২০২৩ সালের মধ্যে এই বে টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন ও অপারেশনে আনতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে উঠবে এ অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক ব্যস্ত সমুদ্রবন্দর। আর এতে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। এ বে টার্মিনালের মোট ৮৮৮ একর জমির মধ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। জমির মালিকদের টাকা হস্তান্তরের চার সপ্তাহের মধ্যেই জমি বুঝে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৭ একর জমি বুঝে পাওয়ার পরই ডেলিভারি কন্টেইনার ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণ কাজ আগামী এক বছরের মধ্যেই শেষ করতে পারব বলে আশা করি। ফলে বন্দরের শৃঙ্খলা-গতিশীলতা যেমন বাড়বে তেমনি বিমানবন্দর সড়কের যানজটও কমে যাবে। বাকি ৮২১ একর সরকারি খাসজমিও শিগগিরই পাওয়া যাবে।’ বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানের মূল বন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে নির্মিতব্য আধুনিক ‘বে টার্মিনাল’ চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলির রাশমণি ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। তিন পর্বে নির্মাণ কাজে ২০২১ সালের আগেই এ প্রকল্পের প্রথম পর্বের কাজ সম্পন্ন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করে অপারেশনে আনা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে আসা জাহাজে যেখানে সর্বোচ্চ ১৮০০ কন্টেইনার বহন করে সেখানে বে টার্মিনাল ৫০০০ কন্টেইনারবাহী বিশাল জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। বর্তমানে ৯ দশমিক ৫ মিটারের বেশি গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। বে টার্মিনাল হলে ১০ থেকে ১২ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে যেখানে সর্বোচ্চ ১৭টি জাহাজ বার্থিং করতে পারে সে ক্ষেত্রে বে টার্মিনালে একই সময়ে বার্থিং নিতে পারবে ৩০ থেকে ৩৫টি জাহাজ। তখন আর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর না করেই ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল এবং পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে। কমে যাবে জাহাজের গড় অবস্থানকাল। ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নবদিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, বে টার্মিনাল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইউনিট-২। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট একটি মাইলফলক। বে টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার আরো সম্প্রসারিত হবে। ভূমি অধিগ্রহণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটা মিটে গেছে। এখন এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত। বে টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীলতা বেড়ে যাবে। এ দিকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহছানুল হক চৌধুরী বলেন, বে টার্মিনাল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে টার্ন এরাউন্ট টাইম (জাহাজের গড় অবস্থান) কমে আসবে। বে টার্মিনালে বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে ফিডার জাহাজের প্রয়োজন থাকবে না। এতে করে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App