×

মুক্তচিন্তা

বন্ধ হোক অনুমোদনহীন সব হাসপাতাল, ক্লিনিক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫৯ পিএম

চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে পরিচালিত হলে বা উপযুক্ত সেবামান সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব চিকিৎসক কমিশন বাণিজ্যের স্বার্থে রোগীদের হাসপতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাঁদে ঠেলেন, তাদের আইনের আওতায় আনার পন্থাও খুঁজে বের করতে হবে।

রাজধানীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা বাণিজ্য, এগুলোর অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, সর্বোপরি এদের কাছে রোগীদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। গত ২০ এপ্রিল ‘রাজধানীতে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান : ৫০০ মিটারে ২৬টি, ১৪টিই অবৈধ হাসপাতাল’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট দায়ের করা হয়। গত মঙ্গলবার সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশনা জনস্বার্থে খুবই সময়োপযোগী।

রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সেবার মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো রমরমা ব্যবসা করছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকের একাংশের ব্যবসায়িক সম্পর্কের ব্যাপারটি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। চিকিৎসকরা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে ভালো কমিশন পান বলে অভিযোগ রয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচেরও নেই কোনো নিয়ম। তারা যা ধার্য করে রোগীরা তা দিতেই বাধ্য থাকেন। এ ছাড়া যত্রতত্রভাবে গড়ে ওঠা মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা করিয়ে রোগ নির্ণয়ে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়। পরীক্ষার ফলাফল একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একেক রকম হয়। এতে রোগী যেমন বিভ্রান্ত হন চিকিৎসকরাও বিভ্রান্ত হন। বারবার ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে রোগীদের ফতুর হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এসব ব্যাপারে সব মহলেরই অভিযোগ এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওয়াকিবহাল থাকলেও কারো পক্ষ থেকে এর প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই, এটাই রহস্য। সুনির্দিষ্ট আইন ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার অজুহাত দেখিয়ে পার পেতে চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার নয়। জনস্বাস্থ্য নাগরিক অধিকারের প্রধান একটি স্তম্ভ। এটাকে কোনোভাবে অবহেলা করা চলে না। চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে পরিচালিত হলে বা উপযুক্ত সেবামান সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব চিকিৎসক কমিশন বাণিজ্যের স্বার্থে রোগীদের হাসপতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাঁদে ঠেলেন, তাদের আইনের আওতায় আনার পন্থাও খুঁজে বের করতে হবে। এ সংক্রান্ত আইনের সংস্কার, প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন এবং তদারককারী দপ্তরের জনবল বাড়ানো দরকার জরুরি ভিত্তিতে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো খুবই দরকার, যাতে সাধারণ মানুষকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জিম্মি হতে না হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App