×

জাতীয়

মফস্বলে শিক্ষার আলোকবর্তিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০২ পিএম

মফস্বলে শিক্ষার আলোকবর্তিকা
রাউজানের একটি আলোকিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর গুজরা গ্রামের ১৪৫নং উত্তর গুজরা ডা. রাজা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মফিজুর রহমান সওদাগরের মেজো সন্তান, শিক্ষা অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত লিয়াকত আলী চৌধুরীর ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিদ্যালয়টি আধুনিক শিক্ষার একটি অনন্য পাঠশালা হিসেবে গড়ে উঠেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, আধুনিক শিক্ষার প্রায় সব রকম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য সাংবাদিক নেজাম উদ্দিন রানা বলেন, এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৪ সালে এলাকার অত্যন্ত সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ডা. রাজা মিয়ার নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন তারই সুযোগ্য পুত্র সে সময়ের এ অঞ্চলে ম্যাট্রিক পাস করা আলহাজ মফিজুর রহমান সওদাগর। পৈতৃক ৫৭ শতক জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার পিছিয়ে পড়া বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার ছোঁয়া পেতে শুরু করে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে এলাকায় শিক্ষিত লোকের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সেই সময় এলাকার বেশির ভাগ পরিবার সন্তানদের লেখাপড়ার পরিবর্তে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করতেন। কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয় না থাকায় অনেক দূরের স্কুলে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর প্রতি অনাগ্রহ ছিল অধিকাংশ পরিবারের। এর মধ্যে যারা লেখাপড়ার প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন তাদের কাদাপথ মাড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের গুজরা শ্যামাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিংবা তারও দ্বিগুণ দূরত্বে অবস্থিত বিনাজুরী নবীন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। হাইস্কুলের গন্ডি পার হওয়ার পর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে রাউজান কলেজে গিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। ওই সময়ে গ্রামীণ সড়কগুলোর এতই দুরবস্থা ছিল যে কোনো রকমে প্রাইমারির গন্ডি অতিক্রম করার পর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহই হারিয়ে ফেলতো কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বর্ষাকালে গ্রামের কাদাসিক্ত মেঠোপথে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে তটস্থ থাকতো বেশির ভাগ পরিবার। এমন অবস্থা অবলোকন করে বাবার নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এলাকার তৎকালীন একমাত্র ম্যাট্রিক পাস করা যুবক মফিজুর রহমান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘদিন স্কুলের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বিধ্বস্ত স্কুল পুনঃমেরামত করে আবার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন তিনি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘসময় এর খরচ সামলাতে গিয়ে অনেক প্রতিক‚ল অবস্থা সামলাতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে তার স্বপ্নের অগ্রযাত্রা আরো বেগবান হয়। পরবর্তী সময় বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়ে রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এখানে নতুন ভবন বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে বিশেষ অবদান রাখেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকায় শিক্ষার হার ফি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের অনেক কৃতী শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শুধু তাই নয়, অজপাড়াগায়ের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পুরো এলাকায় শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে রেখেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App