×

জাতীয়

রামগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৩৭ পিএম

রামগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প
রামগঞ্জের গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প ও বাঁশবাগান। আবহমান কাল থেকে দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। গৃহে ব্যবহৃত প্লাস্টিকসামগ্রীর দাম তুলনামূলক কম থাকায় বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের পরিবর্তে বর্তমানে মেশিনে তৈরি প্লাস্টিকসামগ্রীর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে গৃহস্থালিদের। ফলে রামগঞ্জে গ্রামবাংলার পরিচিত বাঁশশিল্প অনেকটা বিলুপ্তির পথে ধাবিত। বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েন। একটা সময় রামগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে প্রচুর বাঁশবাগান দেখা যেত। বাঁশের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। এখন রামগঞ্জ উপজেলায় গ্রামবাংলায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশবাগান তেমন দেখা যায় না। গ্রামীণ জনপদের নিম্ন আয়ের মানুষ যারা কাঠ, টিন অথবা ইটের তৈরি ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারেন না বাঁশ তাদের নিত্যসঙ্গী। বাঁশের তৈরি ঘর, বেড়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি কাজের উপকরণ ডালি, কুলা, চালনি, টুকরি থেকে শুরু করে মাছ ধরার আঞ্চলিক ভাষায় হারল, আমতা, বৈচুনিসহ বাঁশের তৈরি গৃহস্থালির ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরেনের আসবাবপত্র তৈরি করা হতো। এ ছাড়া মৃত মানুষের বাঁশের খাটলি থেকে শুরু করে কবরের মাচায় পর্যন্ত বাঁশের ব্যবহার আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। ঐতিহ্যবাহী এ বাঁশ ও বাঁশশিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি নির্মাণ কাজে বাঁশঝাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি প্লাস্টিকসামগ্রীর সহজলভ্যতা ও বাঁশে তৈরি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় রামগঞ্জ উপজেলায় বাঁশশিল্প এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। কয়েক বছর ধরে বাঁশশিল্পে চলছে চরম মন্দা। ফলে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। এখনো এ পেশায় জড়িত আছে রামগঞ্জের প্রায় শতাধিক পরিবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তার ধারে বাড়ির আঙিনায় বসে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙ্গাড়ি, চালনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি, মোড়া, ঝাঁকা, মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন। গৃহিণীরাও রান্নাবান্না ও ঘরের কাজ শেষে বাঁশের তৈরি সামগ্রী তৈরি করছেন। বর্তমানে ক্রেতার অভাব আর এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে কুটির শিল্পীরা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। রামগঞ্জে সোনাপুর বাজারের বাঁশ শিল্পী আবু ইউছুফ জানান, অন্যান্য জিনিসের চেয়ে বর্তমানে চাটাই/টুকরি, মুরগির খাঁচার চাহিদা বেশি থাকায় তারা এখনো এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্র মানে উন্নত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকাররা এসে নিয়ে যান। বাঁশ শিল্পী রোজিনা বেগম বলেন, বাঁশের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পরও নিরুপায় হয়ে পরিবারের সবাই মিলে পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি। শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও বাঁশ শিল্পীরা এ পেশা ধরে রাখতে চান। বিদেশেও বাঁশের তৈরি সৌখিন জিনিসের অনেক কদর আছে। সরকার এসব শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং কারিগরি উপকরণ সরবরাহ করলে বাঁশ শিল্পীরাও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App