জলদস্যুরা মৌসুমের শুরুতেই বেপরোয়া
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩৬ পিএম
মৌসুমের শুরুতেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। হঠাৎ জলদস্যুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ফিশিং ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা। সম্প্রতি এক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে।
বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ জলদস্যুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ফিশিং ট্রলার মালিক-শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে ট্রলার ঘাটে রেখে অনেক শ্রমিক পালিয়ে গেছেন সাগরে যাওয়ার ভয়ে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরের লাশের খাড়ি নামক স্থানে কুতুবদিয়া উপক‚লের ৫টি ফিশিং ট্রলারসহ ১৫টি ফিশিং ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুদের গুলিতে ৪ জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ জেলেদের মাঝি শফিউল্লাহ (৪০), মো. আলী (৩০), কামাল (২৮) ও মো. আনিচ (৩২) বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত মোহাম্মদ আনিচ জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে কুতুবদিয়া উপক‚লের আকবর বলিঘাট থেকে গভীর সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশে যান। কুতুবদিয়া উপক‚ল থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের লাশের খাড়ি নামক স্থানে মাছ ধরারত অবস্থায় অন্য ট্রলারযোগে ১৪-১৫ জন অস্ত্রধারী জলদস্যু তাদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাদের লক্ষ্য করে জলদস্যুরা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় তার ট্রলারের ৪ জেলে গুলিবিদ্ধ হন। গত শনিবার রাতে ট্রলারটি উপকূলে ফিরে এলে গুলিবিদ্ধ জেলেদের প্রথমে কুতুবদিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক আবাসিক মেডিকেল অফিসার জয়নাল আবেদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এফবি মায়ের দোয়া ফিশিং ট্রলারের মালিক নুরুল হুদা জানান, গত শনিবার রাতে জলদস্যুরা তার ট্রলারে হামলা চালিয়ে ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে দুই দিন জিম্মি করে রেখে মোবাইলের মাধ্যমে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তাদের ছেড়ে দেয়। একই অবস্থায় তাবলরচর গ্রামের সফর মুল্লুক কোম্পানির একটি ট্রলার ডাকাতের কবলে পড়ে। এ ছাড়া মাঝি শফিউল্লাহর দেখা মতে জলদস্যুরা সাগরে আরো ১৫টি মাছ ধরার ট্রলারের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে বঙ্গোপসাগরে
মহেশখালীর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরেও চলছে জলদস্যুদের তান্ডব। জলদস্যুদের ভয়ে অনেকেই উপক‚লে ফিরে এসেছেন। মহেশখালীর জহির মাঝি বলেন, মালিকের লোকসান হলেও আমাদের করার কিছু নেই। সমুদ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা সাগরে যেতে পারি না।
জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি না হাওয়া পর্যন্ত আমাদের কোনো সদস্য সাগরে যাবে না। যেখানে জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। জলদস্যুরা হত্যা করলেও কোনো প্রতিকার নেই।
জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, ভয়ে মাঝি-মাল্লারা সাগরে যেতে চান না। কিন্তু প্রতিটি শ্রমিকই বিপুল টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। তারা না যাওয়ায় মালিকপক্ষ চরম লোকসানে পড়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেই গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। যারা প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের সহযোগিতা করে থাকে। জলদস্যুরা যে মালামাল নিয়ে আসে তা বিক্রি করে এ চক্রটি। তাই এই চক্রকে আইনের আওতায় আনলে সাগরে জলদস্যুতা অনেকাংশে কমে যেত।
কুতুবদিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউসের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, কুতুবদিয়া থানার তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ডাকাত পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বর্তমানে বহিরাগত ডাকাতরা কুতুবদিয়ায় এসে অবস্থান নিয়েছে। তবে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মহেশখালী ভিত্তিক একটি চক্র তাদের সঙ্গে কাজ করছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন জানান, সাগরে আগের চেয়ে নিরাপত্তা অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে। কোনো জলদস্যু ছাড় পাবে না। এর প্রধান দায়িত্ব পালন করছে কোস্টগার্ড।