×

জাতীয়

সরকারের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ইচ্ছা নেই : বিএনপি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৪৬ পিএম

সরকারের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ইচ্ছা নেই : বিএনপি
সরকারের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ইচ্ছা নেই : বিএনপি

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবর্তে ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’র ইচ্ছার প্রতিফলন দেখছে বিএনপি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠনে অংশগ্রহণ শেষে গণমাধ‌্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ মন্তব‌্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। এখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে পথে এগুচ্ছেন, সেই পথটা হচ্ছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের রায় নেওয়ার কোনো পথ আমরা দেখতে পারছি না এবং তার কোনো ইচ্ছা নেই। সকল দল সমান সুযোগ নিয়ে অংশগ্রহণ করবে, সেই ইচ্ছাও তাদের নেই।’

নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হবে, এটা ঠেকানোর শক্তি কারো নেই- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব‌্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা তো তিনি (শেখ হাসিনা) বলেই আসছেন। এসব কথা বলেই তো তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চান। রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চান। জনগণকে এখানে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সমস্ত যে ইভিল ডিজাইন আছে তাদের পরাজিত করবে।’

আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের পথ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন পথ- জনগণ। জনগণই এর উত্তর দেবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা বাস্তব কথা যে, এখন বড় সংকট হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। যেটা গোটা দেশের মানুষের দাবি। সেই দাবিগুলোকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নাকচ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু হবে। সংবিধান তো মানুষের তৈরি করা। ইতিপূর্বে যে সংবিধান ছিল সেটা তো তারাই পরিবর্তন করেছেন। সংবিধান তো অসংখ্যবার কাটছাঁট করে তারা তাদের সুবিধামতো করে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে জাতি আশা করেছিল, বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করার স্বার্থে তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচক কথা বলবেন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেন সুষ্ঠুভাবে আসতে পারে সংসদে নির্বাচনে সেই ব্যবস্থা নেবেন। সেটা তারা করতে পারেননি। এই ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।’

বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে সমস্ত দেশে আবার ধরপাকড় করা শুরু করেছেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা একটা নির্বাচন করতে চান। তারা বলেন যে গণতন্ত্র আছে। এটা কোন গণতন্ত্র যে সবদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে আর তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাবেন। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের দাবি নিয়ে লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। এটা তো বিএনপির দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি যে আমরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। আমরা প্রতিনিধিত্বটা চাই যেটা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব হবে, জবাবদিহিমূলক সংসদ হবে, সকলে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে জনগণের কাছে। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য জনগণই তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং জনগণই একথাগুলোর জবাব দেবে।’

এর আগে যুব ফোরামের উদ্যোগে উন্মুক্ত ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শত সদস্য অংশ নেন। তারা উন্মুক্ত এই সংসদের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক দল, জাতীয় সংসদ, সংবিধান, ন্যায়পাল, গণভোট, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কিত নানা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে প্রস্তাবগুলো উন্মুক্ত সংসদে কণ্ঠভোটে দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা শুধু নয়ন বাঙালির ক্ষেত্রে নয়, সারা দেশে অসংখ্য যুবকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, ঘটছে। অনেকে গুম হয়ে গেছে, অনেকে খুন হয়ে গেছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছে, অনেকে পুত্র হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে। ওই যে মা বসে আছেন, কিছুক্ষণ আগে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল আর বলছিলেন, আমার ছেলেটাকে অনেকদিন ধরে দেখিনি, আমার নাতি-নাতনিগুলোকে দেখিনি- এটা হচ্ছে বাস্তবচিত্র বাংলাদেশে।’

‘আমাদের দেশের মানুষ দুই ভাগ হয়েই আছে। এক দল অত্যন্ত সুবিধা পাচ্ছেন, আরেক দল সুবিধাবঞ্চিত। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য তো এ দেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে গুটিকতক লোকের হাতে সেই সুযোগ গুলো চলে গেছে। তাদের বক্তব্যের মধ্যে, চলার মধ্যে সেই দাম্ভিকতা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে চলেছে।’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে যুব সমাজকে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

যুব ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জি এম রাব্বানীর (নয়ন বাঙালি) ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নয়ন বাঙালি যুবকদের কথা বলতে গিয়ে, একটা সৃজনশীল সমাজের কথা বলতে গিয়ে, একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে তাকে নির্যাতিত হতে হয়েছে। জীবনের হুমকির কারণে তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।’

সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম মুনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টর সভাপতি ববি হাজ্জাজ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের বিদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জি এম রাব্বানী (নয়ন বাঙালি) অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম মুনিরকে সভাপতি ও সোহান হাফিজ শাহকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App