×

জাতীয়

গাঁজার পুরিয়া থেকে ইয়াবা ব্যবসায় ২৫ মাদক সম্রাজ্ঞী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২০ পিএম

গাঁজার পুরিয়া থেকে ইয়াবা ব্যবসায় ২৫ মাদক সম্রাজ্ঞী
রাজধানীর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ অনেকটা মহিলাদের হাতে, এমন খবর পুরনো। মাদক ব্যবসা করে অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন। অনেকের রয়েছে বাহিনী। গাঁজা ও হেরোইনের পুরিয়া বিক্রির মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় যাদের হাতেখড়ি তারা ফেনসিডিল ব্যবসার পর এখন ইয়াবায় সক্রিয়। মরণ নেশায় শতাধিক নারী জড়িত থাকলেও চিহ্নিত ২৫ ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’র তালিকা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তালিকা নিয়ে তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তালিকায় থাকা চারজন গ্রেপ্তার হলেও বাকি ২১ জন সটকে পড়েছে। কক্সবাজার থেকে তারা বিলাসবহুল গাড়িতে ও আকাশপথে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে। নানা কায়দায় ইয়াবার চালান হাতবদল করে তারা। গুঞ্জন রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের সঙ্গে তাদের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা পেয়েছে তাতে বেশ কয়েকজন নারীর নাম রয়েছে। তালিকা ধরে অভিযান চলছে। রাজধানীতে পালাক্রমে র‌্যাব ও পুলিশের ব্লক রেইড চলছে। বস্তি টার্গেট করেও চলছে অভিযান। চিহ্নিত বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী স্থান বদল করলেও তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক সম্রাজ্ঞীদের মধ্যে এক নম্বরে আছেন যাত্রাবাড়ী থানার ৩ নম্বর পার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা হজরত আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৮)। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী রহিমা কোটিপতি। ঢাকায় তার অন্তত দশটি বাড়ি রয়েছে। বিশ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসা রহিমা এক সময় গাঁজা বিক্রি করতেন। এখন ইয়াবা ব্যবসা করেন। টেকনাফ থেকে সরাসরি ইয়াবা এনে ঢাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করেন তিনি। নিজে চলাফেরা করেন বিলাসবহুল গাড়িতে। তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী সুফিয়া আক্তার ওরফে সুফি (৪৫)। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান, স্বামীর নাম আক্তার হোসেন। যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদের ১০১ ওয়াসা কলোনির বাসিন্দা সুফির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও শ্যামপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে। সুফিও এক সময় গাঁজা বিক্রি করতেন। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন। ঢাকা শহরে তারও একাধিক বাড়ি রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে এলাকার জমিলা খাতুনের (৫০) নাম রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে। তার বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় তিনটি, মতিঝিল থানায় একটি, মুগদা ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় একটি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মামলা রয়েছে। সবুজবাগ থানার ৪৬ নম্বর ওহাব কলোনির বাসিন্দা শামসুন্নাহার চম্পার (৪০) বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মাদকসহ ১৪টি এবং মতিঝিল থানায় একটি মামলা রয়েছে। চম্পার মেয়ে আরমানের স্ত্রী তানিয়া বেগমও এলাকায় মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ছয়টি ও খিলগাঁও থানায় একটি মামলা রয়েছে। শামসুন্নাহার চম্পা ও তানিয়া রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করেন। দক্ষিণখান এলাকায় তাদের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। সবুজবাগের ওহাব কলোনির আরেক ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ সুফিয়া আক্তার শোভা (৫০)। ১২১ নং ওহাব কলোনির বাসিন্দা শোভার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মাদকদ্রব্য আইনে ১০টি মামলা রয়েছে। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বি-ব্লকের ২৩৯ নম্বর বাসার ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ ফারহানা আক্তার পাপিয়া ওরফে ইয়াবা পাপিয়া ও তার স্বামী জয়নাল আবেদীন পাচু চলমান অভিযানে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আটক হয়েছেন। পাপিয়া সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন। মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি পাপিয়া এর আগেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আদালতের মাধ্যমে জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি আগের মতো মাদক ব্যবসায় ফিরেছেন। মিরপুর ভাসানটেক ১নং বস্তির সোহরাব হোসেনের স্ত্রী মাদক সম্রাজ্ঞী মোর্শেদার (৩৩) বিরুদ্ধে ভাসানটেক থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। ভাসানটেক এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী স্বপ্না (৩১)। ভাসানটেক এলাকার ৩নং ধামালকোটের পাশে রহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া স্বপ্না কারাগারে আছেন। রূপনগর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী সালেহা বেগম (৪৮)। রূপনগর থানার দুয়ারীপাড়ার ৮ নম্বর সেকশনের ১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় থাকেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় ২১টি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা রয়েছে। কামরাঙ্গীরচর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী শাহিনুর বেগম ওরফে দিনারা ওরফে মিনারা ওরফে শাহনাজ বেগম ওরফে শাহিনুর (৪২)। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের বি-ব্লকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বাসায় থাকেন তিনি। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে। কাওরানবাজার এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী শিল্পীর (৩০) বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৭টি মামলা রয়েছে। চলমান অভিযানে তিনি গ্রেপ্তারের পর কারাবন্দি। কারওয়ানবাজার এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী আকলিমা আক্তারের (২৫) বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানার মাদক সম্রাজ্ঞী জ্যোৎস্না বেগম (৩১) থাকেন পশ্চিম কাফরুলের ২২৮/এ তালতলার রতন মিয়ার টিনশেড বাড়িতে। তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। কারওয়ানবাজার রেলওয়ে বস্তির আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী মিনারের (৩৫) বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তির বাসিন্দা মাদক সম্রাজ্ঞী মরিয়ম বেগম কুট্টির (৩৪) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুটি। একই এলাকার মাহমুদা নামে আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর বিরুদ্ধেও তেজগাঁও থানায় মামলা রয়েছে দুটি। কাঁঠালবাগান বাজার মসজিদের গলির ১৬০/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসিন্দা মাদক সম্রাজ্ঞী শাহনাজের (২৫) বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় ৭টি মাদক মামলা রয়েছে। খুরশিদা বেগম ওরফে খুশি (৩১) মাদক ব্যবসা করেন মিরপুর, নিউমার্কেট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। মিরপুরের কালাপানি বস্তি, নিউমার্কেট ১ নম্বর গেটে ভাসমান অবস্থায় আর কামরাঙ্গীরচরের নয়াগাঁও ২৫২ নম্বর মুড়ির ফ্যাক্টরি এলাকায় মাদক ব্যবসা করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানাতেই ১৫টি মামলা রয়েছে। নিউমার্কেট এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হাসি বেগমের (৩৫) নিউমার্কেট ১ নম্বর গেটের সামনে ভাসমান অবস্থায় মাদক ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। হাজারীবাগের মাদক সম্রাজ্ঞী বীণা হাজারীবাগ থানাধীন বৌবাজার এলাকার ১৮/বি রানা বেকারির গলিতে থাকেন। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। মাদকসহ আটক হওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদন্ড ভোগ করেন তিনি। একই এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী নূর নাহার নুন্নী হাজারীরবাগ থানাধীন ১৬নং চড়কঘাটা রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ৯টি মাদকসংক্রান্ত মামলা রয়েছে। নুন্নীও মাদকসহ আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদন্ড ভোগ করেছেন। এই এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী জমিলা ওরফে জামিলা ওরফে জামেলা বেগম (৪৭) গণকটুলী সুইপার কলোনিতে থাকেন। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। পুরান ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞী পারুলী রানী (৩৮)। রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ১০/১ কৈলাশ ঘোষ (বুড়িরবাগান) এলাকায় তার বাসা। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ৫টি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। খিলক্ষেত এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী নাজমা বেগম (৪৮) বেপারি পাড়ার খ-২১ নম্বর বাসায় থাকেন। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় ১৮টি ও কদমতলী থানায় একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App