×

মুক্তচিন্তা

একাত্তরের জননী রমা চৌধুরীর প্রয়াণ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫১ পিএম

আমরা তাকে আর চট্টগ্রামের পথে পথে বই ফেরি করতে দেখব না। তিনি একাত্তরের পর সামাজিক নানা প্রতিক‚লতা সত্ত্বেও অসম সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তার আদর্শ ধারণ করে আমরা যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারি, তবেই তার প্রতি আমাদের সম্মান জানানো হবে।

চলে গেলেন সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক, বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। একাত্তরের জননী খ্যাত এই সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

গল ব্লাডারে পাথর, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বছরের ১৫ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৪১ সালে বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে রমা চৌধুরীর জন্ম। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। শত বাধা পেরিয়ে মা মোতিময়ী চৌধুরীর প্রেরণায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন রমা চৌধুরী। তিনিই ঢাবি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী। একাত্তরের ১৩ মে ভোরে নিজ বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসরদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন রমা চৌধুরী। স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশে হারিয়েছেন তিন ছেলে। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন শেষে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। একজন শহীদ জননী, একজন বীরাঙ্গনা, একজন মমতাময়ী মা এই মাটিতেই খুঁজে পায় শ্রদ্ধা আর অনুভবের সবটুকু। মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। যুদ্ধকালে এবং পরে একে একে হারান তিন সন্তানকে। পুত্রশোকে তিনি এরপর থেকে পাদুকা না পরে খালি পায়ে চলাফেরা করে আসছিলেন। তার আকুতি, যে মাটিতে সমাহিত অকালপ্রয়াত তিন সন্তান, সেই মাটির ওপরে তিনি স্যান্ডেল পরে হাঁটবেন কীভাবে? আমরা নির্লজ্জ হাঁটতে পারি, গাইতে পারি- পারেননি একজন রমা চৌধুরী। রমা চৌধুরীর দীর্ঘ যাপন আর বিশ্বাসের বিশদ খতিয়ান আমরা দেখতে পাই তারই রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে। তিনি জেগে থাকবেন তার কবিতায়, উপন্যাসে, গল্পে, প্রবন্ধে এবং গবেষণায়। রমা চৌধুরী আর দশজন লেখকের মতো ছিলেন না, ফলে তার রচিত বই যে কোনো লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না; তিনি নিজ হাতে ফেরি করতেন তার রচিত বইগুলো। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও কবিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার ১৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রিয় রমা চৌধুরী, যিনি এ দেশের আলো-হাওয়া ছেড়ে স্বর্গেও যেতে চাননি, আমরা তাকে আর চট্টগ্রামের পথে পথে বই ফেরি করতে দেখব না, তাকে দেখতে পারব না সুন্দর সুন্দর কথামালার ভেতরে। তিনি একাত্তরের পর সামাজিক নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসম সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তার আদর্শ ধারণ করে আমরা যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারি, তবেই তার প্রতি আমাদের সম্মান জানানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App