×

জাতীয়

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে অবৈধ ট্রলারে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পারাপার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৫১ পিএম

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে অবৈধ ট্রলারে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পারাপার
ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াসহ এ এলাকার বিভিন্ন নৌরুটে অবাধে চলাচল করছে যাত্রীবাহী দুই শতাধিক অবৈধ ট্রলার। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ওই ট্রলারগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মুখে যাত্রীবোঝাই করে দিনরাত চলাচল করায় প্রায়ই সেখানে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার আলোকদিয়াচর এলাকায় যমুনা নদীতে মালবাহী এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী এক ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এতে শিশুসহ তিন যাত্রী নিখোঁজ হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, উভয় ঘাট এলাকার একদল প্রভাবশালী লোক স্থানীয় নৌপুলিশ ফাঁড়িসহ বিআইডবিøউটিএর আরিচা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপার কাজ চালিয়ে আসছেন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়াঘাট, অন্তারমোড়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, আরিচা, ঝিটকা, পাবনার নগরবাড়ী ও কাজীরহাটসহ এলাকার বিভিন্ন নৌপথে ছোট-বড় দুই শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রলার দিন-রাত চলাচল করছে। এর মধ্যে ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার সাধারণ যাত্রী ট্রলারে নদী পারাপার হয়ে থাকেন। এদিকে বিআইডবিøউটিসির দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এ রুটে লঞ্চ, ফেরি, মালবাহী কার্গো জাহাজসহ বড় বড় বিভিন্ন নৌযান সার্বক্ষণিক চলাচল করে। এর মধ্যে যাত্রী নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় না এনে সেখানে দিনরাত চলাচল করছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ অনেক ট্রলার। এতে চলাচলকারী কোনো ফেরি, লঞ্চ ও কার্গো জাহাজের সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগলেই যাত্রীবোঝাই ট্রলার উল্টে যেতে পারে। পাশাপাশি আবহাওয়া পরিস্থিতিসহ সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ট্রলারগুলো চলাচল করায় প্রায়ই সেখানে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার আলোকদিয়াচর এলাকায় যমুনা নদীতে মালবাহী এক কার্গো জাহাজের সঙ্গে যাত্রীবোঝাই অপর এক ট্রলারের ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটি উল্টে যমুনা নদীতে ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারে থাকা অধিকাংশ যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেলেও শিশুসহ তিন যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তবে গত মঙ্গলবার ট্রলারডুবি ঘটনার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার এক ট্রলার মালিক মো. লতিফ মাঝি জানান, নৌরুটে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রলারের মালিক মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার পাটুরিয়া ও আরিচা এলাকার। প্রতিটি বড় ট্রলারে ৮০ থেকে ১০০ এবং ছোট ট্রলারে ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী বহন করা হয়। তবে যাত্রী পারাপারে ট্রলারগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন লাগে না। তিনি আরো বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতি যাত্রীর ট্রলার ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা, যা লঞ্চ ও ফেরির চেয়ে ১০ টাকা কম। পাশাপাশি নৌপথ পাড়ি দিতে সময় অনেকটা কম লাগায় সাধারণ যাত্রীদের অনেকেই ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকেন। এদিকে ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকার একদল প্রভাবশালী লোক বিআইডবিøউটিএর আরিচা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ উভয় ঘাটের নৌপুলিশ ফাঁড়ির সঙ্গে যোগসাজশ করে দীর্ঘদিন ধরে নৌপথে অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ জন্য ট্রলার মালিকদের কাছ থেকে তারা প্রতিদিন ট্রলারপ্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকেন। চাঁদার ওই টাকা থেকে তারা সংশ্লিষ্ট বিআইডবিøউটিএর আরিচা অফিস ও উভয় ঘাটের নৌপুলিশ ফাঁড়ির লোকজনকে ‘ম্যানেজ’ করে থাকেন। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব থাকায় ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন নৌপথে অবৈধ ট্রলার চলাচল সহসা বন্ধ হচ্ছে না। এদিকে ম্যানেজ মানির বিনিময়ে অবৈধ ট্রলার চলাচলের অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতদিয়া ঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান মোল্লা বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে অবৈধ ট্রলার চলাচলের বিষয়টি নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে নৌপুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় গত ঈদের আগে থেকে এই নৌপথে অবৈধ ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) আরিচা নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, নৌপথে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআইডবিøউটিএর পক্ষ থেকে নৌপুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে অবৈধ ট্রলার চলাচলে বিআইডবিøউটিএর লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App