×

জাতীয়

চার দশকে সবচেয়ে সংকটে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৩৩ পিএম

চার দশকে সবচেয়ে সংকটে বিএনপি
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পলাতক, শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার রায়, সারা দেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঝুলছে হাজারো মামলা, বলা হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্পর্কে। আজ দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠার চার দশকে এসে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে দলটি। নেই দৃশ্যমান সাংগঠনিক শক্তি। নেই নেতৃত্বের দৃঢ়তা। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। সর্বশেষ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত সরকারে ছিল দলটি। এরপর নেমে আসে সংকট। ১/১১-এর জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার হন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রায় এক ডজন দুর্নীতি মামলার আসামির তালিকায় উঠে তার নাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়। বর্জন করে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে টানা ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। ফলে রাজনৈতিক কৌশলেও পিছিয়ে পড়েছে দলটি। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন ও খারাপ সময় পার করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে সবচেয়ে গভীর সংকটময় সময় পার করছে এ রাজনৈতিক দলটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির আহŸানকে পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উল্টো সরকারের নানা পদক্ষেপে নিত্যনতুন সংকটে পড়ছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তি আর এখন ইভিএম বাতিলের মতো দাবি যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সময় মাফিক সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ক্ষমতাসীন সরকারকে পরাস্ত করতেও ব্যর্থ হয়েছে দলটি। নিজেদের বিপদ মোকাবেলায় বারবার প্রতিশ্রæতি দিলেও বাস্তবিক অর্থে ব্যাটে-বলে একদমই মেলাতে পারেনি তারা। যার ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতি পাচ্ছে না। জনসম্পৃক্ত ইস্যুসহ দলীয় মোক্ষম ইস্যুগুলো কাজে লাগিয়ে জোরালো কর্মসূচি পালনের বদলে ঘরোয়া আলোচনা সভা, বিবৃতি-ব্রিফিংয়েই জীবিত আছে দলটি। ২০১৩-১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি। এর পরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার পতনের জোরালো আন্দোলনও শেষ অবধি ধরে রাখতে পারেনি দলটি। উল্টো জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসী তাণ্ডবের তকমা গায়ে মেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার পাত্র হয়েছে দলটি। এর পরে চলতি বছরে ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হলেও জোরালো কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি পিছিয়ে রয়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন। এর পেছনেও সরকার ‘দায়ী’ বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী কারাগারে। আবার অনেকে বাড়ি ছাড়া। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। এসব কারণে দলের তৃণমূলও সেভাবে মাঠে নামতে পারছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশ থেকে বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জোরালো আন্দোলনের আহŸান আসবে বলে বিএনপির নীতি-নির্ধারকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সকাল ১০টায় দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি খারাপ সময় পার করছে, এটি সত্য। তবে এই সময় বেশি দিন থাকবে না। যতই ঝড়-তুফান আসুক, বিএনপি সেটা মোকাবেলা করবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপির পরিবর্তন আনবে। বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য বিএনপির ভ‚মিকা দেখতে চায় জনগণ। জনগণের মৌলিক অধিকার ফেরাতে বিএনপি জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি সর্বদলীয় ঐক্যের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App