×

মুক্তচিন্তা

বিআরটিএ দুর্নীতিমুক্ত হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৪৬ পিএম

গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। টাকা দিলে আনফিট গাড়ি ফিট আর না দিলে ফিট গাড়ি আনফিট হয়ে যাবে- এ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। অন্যদিকে পুরোপুরি প্রশিক্ষিত না হয়েও টাকার জোরে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রথাও বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কথা তুললেই যানবাহন সংশ্লিষ্ট সবার চোখের সামনে এক ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র ভেসে ওঠে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সেবা খাতের দুর্নীতি জরিপে বিআরটিএর দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা থেকেই এ সংস্থাটির দুর্নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। টিআইবির জরিপে শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এর পরেই রয়েছে পাসপোর্ট, বিচারিক সেবা, বিআরটিএ, ভ‚মি সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। গত বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেবা খাতের এমন অনিয়ম দুর্নীতির খবর সাধারণ মানুষদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াবে এটা স্বাভাবিক।

টিআইবির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে এ রকম খাতের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। এখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এর পরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ, পাসপোর্ট ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ঘুষ দেয়ার কারণ হিসেবে সেবা গ্রহিতারা জানিয়েছেন ঘুষ না দিলে সেবা না পাওয়া, হয়রানি বা জটিলতা এড়ানো, নির্ধারিত ফি জানা না থাকা, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া, অবৈধ সুবিধা বা সুযোগ প্রাপ্তির জন্য তারা ঘুষ দিয়েছেন। এভাবে ঘুষের লেনদেন অব্যাহত থাকা হতাশাব্যঞ্জক। দেশের সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিআরটিএ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের পর লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র তৈরির হিড়িক দেখা যায়। এই সুযোগে বিআরটিএর কার্যালয়েই দালালদের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। বিআরটিএ অনিয়ম-দুর্নীতির খবর নতুন নয়। বিভিন্ন সময় বিআরটিএর অভ্যন্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালানো হয়েছে। এরপর কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম হলেও আবারো আগের চেহারায় ফিরে এসেছে। আমরা মনে করি, বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য কমে আসবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অদক্ষ ও অবৈধ চালক। বিআরটিএ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখনো এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এই সংস্থার একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে জাল সিল ও ট্যাক্স টোকেন সৃজন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি গায়েব, শুল্কবিহীন গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির দৃষ্টান্তও আছে। এখানে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি, ভোগান্তি আর দালালদের তৎপরতা চললেও তা দেখার এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ যেন থেকেও নেই। বিআরটিএতে লাইসেন্স ও ফিটনেসসহ বিভিন্ন সেবায় যে ঘুষ দিতে হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তদারকি বাড়াতে হবে, দালাল তাড়াতে হবে, কাউন্টার বাড়াতে হবে, চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে। টাকা দিলে আনফিট গাড়ি ফিট আর না দিলে ফিট গাড়ি আনফিট হয়ে যাবে- এ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। অন্যদিকে পুরোপুরি প্রশিক্ষিত না হয়েও টাকার জোরে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রথাও বন্ধ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App