×

পুরনো খবর

জয় ধরে রাখতে চায় আ.লীগ পুনরুদ্ধার চেষ্টা বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ০১:৫৭ পিএম

জয় ধরে রাখতে চায় আ.লীগ পুনরুদ্ধার চেষ্টা বিএনপির
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে চলছে মনোনয়ন লড়াই। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে এলাকা। পাশাপাশি নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে চলছে মিছিল, মিটিং ও গণসংযোগ। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে কোন্দল রয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডের চেয়ে নিজেদের জানান দিতেই বেশির ভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণায় বেশ তৎপর থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। আসনটি ধরে রাখতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আর হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চেষ্টা করছে বিএনপি। ১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-১ আসন। আর শুধু কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে ছিল কিশোরগঞ্জ-২ আসনের অবস্থান। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে ছয়টি আসনে পুনর্বিন্যাস করা হয়। এতে পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদী এ দুটি উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়। আর হোসেনপুর উপজেলাকে কিশোরগঞ্জ সদরের সঙ্গে সংযুক্ত করে কিশোরগঞ্জ-১ আসন করা হয়। আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি শুধু কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। নির্বাচনে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিগত দিনে সংসদ সদস্যের রোষানলে পড়ে শত শত নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি পাকুন্দিয়ার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন। তবে সংসদ সদস্য নিজেকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দাবি করে বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানির কথা অস্বীকার করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ছাড়াও মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম এ আফজল। এর আগে শুধু কটিয়াদী উপজেলাকে নিয়ে আলাদা আসন থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এডভোকেট এম এ আফজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। এ আসনে এম এ আফজল এবার শক্তিশালী প্রার্থী বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে সরব রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপু, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু ও কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম এ আফজল জানান, কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে চাচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে দলীয় কোন্দল ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে তিনি জানান। মনোনয়ন প্রত্যাশী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিতে পারবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঈনুজ্জামান অপু তরুণদের সঙ্গে নিয়ে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম রেনু জানান, তিনি ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের মুজিব সৈনিকদের বক্তব্য হচ্ছে, এডভোকেট এম এ আফজল গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএস ছিলেন। জাতির দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে সভাপতি থাকাকালীন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন সর্বোপরি ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে জীবন বাজি থেকে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরও তিনি রাজপথ ছাড়েননি। যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থেকে নিজেকে শতভাগ সৎ ও স্বচ্ছ প্রকৃত মুজিব সৈনিক হিসেবে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ত্যাগী ও পরীক্ষিত এ নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হলে এ আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি, পাকুন্দিয়া বিএনপির সভাপতি ও পাকুন্দিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি মো. ইদ্রিস আলী ভ‚ঞা, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহমেদ জুনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। দুবারের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন জানান, নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার পর সব কিছু বলা যাবে বলে তিনি জানান। পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন জানান, তিনি ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখনো দলকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে তিনি জানান। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রবীণ নেতা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া জানান, নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদ। তিনি গত কয়েক মাসে দুই উপজেলায় শতাধিক সভা-সমাবেশ করেছেন। তিনি জনগণের আস্থা অর্জনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা স্পষ্ট নয়। নূর মোহাম্মদ জানান, আগামী অক্টোবরের পরই দলীয় পরিচয় ঠিক হবে। তিনি আরো জানান, একটি সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার জনগণকে সম্পৃক্ত করে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করাই তার লক্ষ্য বলে তিনি জানান। এদিকে মনোনয়ন লড়াইকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে কোন্দল ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে কোন্দল আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯২৫ জন। এর মধ্যে নারী ২ লাখ ১০ হাজার ৮৬৯ ও পুরুষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App